প্রশান্ত পাল, পুরুলিয়া
অলচিকি ভাষায় পঠন-পাঠনের অনুমোদন হয়েছিল গত বছরের জুলাই মাসে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একাধিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে অলিচিকি হরফের পাঠ্যবই-ই এসে পৌঁছয়নি!
এমনই অভিযোগ জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল সাঁওতাল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন পুরুলিয়া শাখার। রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর জঙ্গলমহলের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ দিতে ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অলচিকি হরফে লেখাপড়া করার অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু তার কোনও প্রতিফলন এখনও নেই।
সংগঠনের পক্ষে আরও অভিযোগ, যে ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অলচিকি ভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা দেখা যাচ্ছে না বাংলা শিক্ষা পোর্টালেও। ফলে ধোঁয়াশা কাটছে না। ২ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে পালিত হয়েছে ‘বুক ডে’। নতুন শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়াদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু সেই সুযোগ থেকে এখনও বঞ্চিত অলচিকি ভাষায় পড়াশোনা করা পড়ুয়ারা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক শত্রুঘ্ন মুর্মু বলছিলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পরে পেরিয়ে গিয়েছে আড়াই মাস। কিন্তু এখনও সাঁওতালি মাধ্যমের বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা পাঠ্যবই হাতেই পায়নি। এই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে। তবে সমাধানসূত্র এখনও মেলেনি।’
জঙ্গলমহলের ব্লক বলরামপুরের ইচাডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক কালিপদ হেমব্রমের মুখেও শোনা গেল একই ধরনের সমস্যা কথা। তিনি বলছেন, ‘এই স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ুয়ার সংখ্যা ৬৩, কিন্তু মাত্র পাঁচ-ছ’জন পড়ুয়া-ই বই পেয়েছে।’ দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া হুলাসি টুডু, অনিতা মান্ডি, শ্যামলী টুডু বা তৃতীয় শ্রেণির সন্দীপ মুর্মুদের বক্তব্য, ‘আমরা এখনও বই পাইনি।’
এই ব্লকেরই উলিডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তারাপদ হেমব্রমের অভিজ্ঞতাও এক। স্কুলের প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া সাধন টুডু, লক্ষ্মীকান্ত কিস্কু বা রাজীব কিস্কুর কথায়, ‘আমরা বই পাইনি। মাস্টারমশাইকে বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, পরে বই আসবে। তা হলে কী ভাবে চলছে পঠনপাঠন?’ শিক্ষকেরাও জানাচ্ছেন, হাতে গোনা যে ক’জন পড়ুয়ার কাছে চার-পাঁচটি বই রয়েছে তা দিয়েই কোনওরকমে কাজ চালানো হচ্ছে। এতে সমস্যা ক্রমশ জটিল হচ্ছে।
তা হলে প্রশাসন কী করছে? জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান, বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেনর মন্তব্য, ‘বইয়ের সমস্যা দ্রুত মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কানাইলাল বাঁকুড়া বলছেন, ‘পাঠ্যক্রমটি একেবারেই নতুন, কিছু বই এসেছে। বাকি পড়ুয়াদের বইও এসে যাবে।’
তবে সংগঠনের দাবি, যে ৬৫টি স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় পঠন-পাঠনের অনুমতি রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর দিয়েছে, বাংলার শিক্ষা পোর্টালে এই ভাষায় পড়াশোনা সম্পর্কিত কোনও তথ্যই দেখা যাচ্ছে না। শত্রুঘ্ন মুর্মুর প্রশ্ন, ‘অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে যে সাঁওতালি ভাষায় পড়াশোনা হয়, সেটা কেন পোর্টালে দেখা যাবে না? আমরা এই প্রক্রিয়ার সংশোধন দাবি করছি। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, আদৌ এই স্কুলগুলিতে অলচিকি ভাষায় পড়াশোনা হবে কি না।’
প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজীবলোচন সোরেনের মন্তব্য, ‘সমস্যাটি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই এর সমাধান করা হবে।’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের বক্তব্য, ‘বিভিন্ন চক্রের পরিদর্শকদের কাছে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কী রিপোর্ট আসবে, তা দেখার পরেই রাজ্য শিক্ষা দপ্তরে পুরো বিষয়টি জানাতে হবে।’