• পাড়াগাঁয়ে রিলস-ভ্লগ! আপত্তি উড়িয়ে চা হাতে রাশিয়ান দিদি
    এই সময় | ১৪ মার্চ ২০২৫
  • সৌমিত্র ঘোষ, ডোমজুড়

    তিন মাসের সাময়িক বিরতির পর ফের চালু হলো রাশিয়ান দিদির চায়ের দোকান ‘টি আমো’। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে চালু হয় আন্দুলের তরুণী পাপিয়া ঘোষালের নিজস্ব ব্র্যান্ডের চায়ের স্টল ‘টি আমো’।

    স্থানীয় একটি ক্লাবের কাছ থেকে স্টল ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন পাপিয়া। কয়েক মাসের মধ্যেই পাপিয়ার চায়ের দোকান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাতে অনুঘটকের ভূমিকা নেয় সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব। মূলত ইউটিউবার ও ভ্লগাররা ‘টি আমো’কে রাশিয়ান দিদির চা স্টল হিসাবে জনপ্রিয় করে তোলেন।

    ম্যানেজমেন্টের স্নাতক পাপিয়ার মিষ্টি ব্যবহার এবং বিশেষ ফ্লেভারের চায়ের জন্য তাঁর দোকানে ভিড় বাড়তে শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের দৌলতে দূর–দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় জমাতে শুরু করেন সেখানে। কিন্তু মাস তিনেক ব্যবসা চলার পর আচমকা ক্লাবের কর্মকর্তারা হঠাৎ বেঁকে বসেন।

    স্থানীয় লোকজনও তাঁকে হটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে। পাপিয়াকে দোকান গুটিয়ে ফেলার ফতোয়া দেওয়া হয়। এক সময়ে মডেলিংয়ের কাজ করা পাপিয়ার বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং রিলস নিয়ে আপত্তি তোলেন এলাকার কিছু মানুষ। যদিও এ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন পাপিয়া।

    তাঁর স্পষ্ট কথা, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কী করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কী পোস্ট করলেন, কোন ধরনের রিলস বানালেন অথবা তাঁকে নিয়ে কে কী পোস্ট করল, তার সঙ্গে তাঁর ব্যবসার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এ নিয়ে কারও কাছে জবাবদিহি করবেন না। কোনও চাপে দোকান তুলবেন না।

    তাঁর চায়ের দোকান জোর করে বন্ধ করে দেওয়ায় শেষে আইনের শরণাপন্ন হন পাপিয়া। ডোমজুড় থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। কিন্তু তাতেও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। পাপিয়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বক্তব্য জানান এবং এ বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানান। ‘এই সময়’–এও দোকান বন্ধের খবর প্রকাশিত হয়। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে ফের খুলতে চলেছে দোকান।

    সম্প্রতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাপিয়াকে ডেকে নতুন করে আবার দোকান চালু করতে বলা হয়। তবে পুরোনো জায়গায় নয়। আগে যেখানে ‘টি আমো’র স্টল ছিল সেখান থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে চায়ের দোকান খোলার জন্য একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসন থেকে। প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে আবার নতুন করে টি আমো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন পাপিয়া।

    অঙ্কুরহাটি মোড় থেকে আলমপুরের দিকে কিছুটা এগোলে রাস্তার বাঁ দিকে সৃজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের উল্টোদিকে ‘টি আমো’র নতুন স্টল দিয়েছেন পাপিয়া। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আবার সেখানে ভিড় করছেন চা–প্রেমীরা।

    পাপিয়া বলেন, ‘আমার অনেক স্বপ্ন আছে টি আমোকে নিয়ে। আমি ম্যানেজমেন্ট পড়েছি। তার পর চাকরি করেছি। মডেলিংও করেছি। কিন্তু নিজের স্বাধীন ব্যবসা করব। কারও অধীনে থাকব না। আমার দোকান বন্ধ করে দেওয়ায় দু’জন কর্মীকে তিন মাস টাকা দিতে পারিনি। প্রশাসনের সহযোগিতায় আবার দোকান খুলতে পেরেছি। এর জন্য প্রশাসনকে অশেষ ধন্যবাদ।’

  • Link to this news (এই সময়)