বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
বাম আমল পেরিয়ে এখন তৃণমূলের জমানা। পশ্চিম বর্ধমানের রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িকে থানায় উন্নীত করার দাবি রয়ে গিয়েছে এখনও। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার দাবি উঠেছে, ঝাড়খণ্ড সীমানায় সালানপুর থানার অন্তর্গত এই ফাঁড়িকে থানায় রূপান্তরিত করা হোক। সেই দাবি নিয়ে অবশেষে পদক্ষেপ করেছে আসানসোল–দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।
বুধবার রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়ির একটি অনুষ্ঠানে আসানসোল–দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধরি বলেন, ‘ইতিমধ্যে রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়িকে থানা করার প্রস্তাব আমাদের পক্ষ থেকে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উচ্চ স্তরে বিবেচনাধীন রয়েছে।’
পুলিশকর্তারা জানান, ঝাড়খণ্ড সীমানার এই অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সীমানা পেরোলেই ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম, জামতাড়ার মতো এলাকা রয়েছে। রূপনারায়ণপুরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড–বিহার আন্তঃরাজ্য রাস্তা। রূপনারায়ণপুর রেলস্টেশনের পরেই ঝাড়খণ্ডের রেল এলাকা পড়ে যায়।
দেখা গিয়েছে, এই ভৌগলিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে ঝাড়খণ্ড বা অন্য রাজ্য থেকে সহজেই এখানে দুষ্কৃতীরা এসে অপরাধ করে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, রূপনারায়ণপুর সীমানা এলাকায় অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারা। খুনের ঘটনা বা সাইবার ক্রাইমের অপরাধীরাও চিত্তরঞ্জন বা রূপনারায়ণপুর সংলগ্ন এলাকায় ধরা পড়ছে।
প্রায় ৯৪১ একর জমি সমেত বন্ধ হিন্দুস্তান কেবল্স কারখানা ও তার এক হাজারেরও বেশি আবাসন রয়েছে রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ি এলাকায়। কল্যাণ গ্রাম, অরবিন্দনগর, দেশবন্ধু পার্ক, রূপনারায়ণপুর শহরের মতো বড় এলাকা রয়েছে এখানে। রয়েছে প্রায় ৪৫টি বহুতল আবাসন। এ ছাড়া রূপনারায়ণপুর, উত্তরামপুর–জিতপুর, আছড়া সামডি ও আল্লাডি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা এই পুলিশ ফাঁড়ির উপরে নির্ভরশীল। এখানেই রয়েছে রাজ্যের অন্যতম ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিড সেন্টার। রয়েছে কয়লা খনি সমেত একাধিক কারখানা। সালানপুর ব্লকের সমস্ত সরকারি বিভাগের সদর দপ্তর, বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক, একাধিক হাইস্কুল এবং পিঠাইকেয়ারি গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে।
রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়িতে কোনও এফআইআর করা বা কোনও মিছিল–মিটিংয়ের অনুমতি নেওয়া যায় না। তাই এফআইআর করতে গেলে বা কোনও অনুষ্ঠান–সভার অনুমতি নিতে গেলে সালানপুর থানায় যেতে হয়। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ‘ভাবনা’র পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়ে এই পুলিশ ফাঁড়িকে থানায় উন্নীত করার আবেদন জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের সালানপুরের সহ–সভাপতি বিজয় সিং বলেন, ‘রেললাইন পেরিয়ে যেতে হয় সালানপুর থানায়। মাঝে রয়েছে লেভেল ক্রসিং। রেলগেট পড়ে গেলে থানায় যাওয়া বা পুলিশ থানা থেকে অন্যত্র যেতে গেলে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। রূপনারায়ণপুর পূর্ণ থানা হলে এখানকার মানুষের অত্যন্ত সুবিধা হবে।’ একই বক্তব্য রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমানের।
এতদিন রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির ওসির নিজস্ব কোনও আবাস ছিল না। পুরুষ পুলিশকর্মীদের জন্য ফাঁড়ি চত্বরে ব্যারাক থাকলেও মহিলা কনস্টেবলদের ভরসা ছিল বাইরের ভাড়া নেওয়া ঘর। এই অসুবিধা বুঝে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন সালানপুর থানার ইনস্পেক্টর ইনচার্জ অমিত হাটি এবং রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ অরুণাভ ভট্টাচার্য। বুধবার পুলিশ কমিশনার ফাঁড়ির ওসির জন্য আবাস এবং মহিলা কনস্টেবলদের ব্যারাকের উদ্বোধন করেন।