বছর ঘুরলেই বঙ্গে বিধানসভা ভোট। এই সময়ে বিজেপির মধ্যে চলা সাংগঠনিক নির্বাচন পর্বে নজর ছিল রাজ্য রাজনৈতিক মহলের। শুক্রবার দোলের দিনে বাংলায় বিজেপির ২৫টি সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হলো। সেই তালিকায় দলের ‘আদি’-দের উপস্থিতি নজরকাড়া, দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। তাঁদের কথায়, ‘যাঁদের নাম তালিকায় রয়েছে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত।’ উল্লেখ্য, বিজেপির ৪৩টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে।
সম্প্রতি বিজেপিতে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। ‘দলবদলু’-দের দলে যোগ দেওয়া মাত্রই পদ বা টিকিট দেওয়া নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাধিক নেতা। সেই জায়গায় বিজেপি নেতৃত্বের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে দলের পুরনো কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, উত্তর কলকাতায় সংগঠনের দায়িত্ব রাখা হয়েছে তমোঘ্ন ঘোষের হাতেই। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন করা এই নেতা ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। এর পর ২০২২ সালে কল্যাণ চৌবেকে সরিয়ে তাঁকে উত্তর কলকাতায় সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। শোনা যাচ্ছিল, হয়তো এই পদে অন্য কোনও নতুন মুখ আনা হতে পারে। বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের নামও ভাসছিল বিভিন্ন মহলে। কিন্তু শেষমেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তমোঘ্নকেই উত্তর কলকাতার দায়িত্ব দিল দল। দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে বহাল রাখা হয়েছে অনুপম ভট্টাচার্যকে।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমস্ত আসনগুলির উপরে বিশেষ নজর বঙ্গ রাজনৈতিক মহলের। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে বিজেপির সাংগঠনিক জেলাগুলির দায়িত্ব কারা পাবেন, তা নিয়ে কৌতুহল ছিলই। সম্প্রতি বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপসী মণ্ডল যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। সেই জায়গায় মলয় সিনহাকে আনা হবে তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে তাঁর নামেই সিলমোহর পড়েছে। এছাড়াও কাঁথির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সোমনাথ রায়কে।
উত্তরবঙ্গ যে বিজেপির পাখির চোখ, তা আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা। এ দিকে বিজেপির স্পষ্ট নীতি ছিল, জেলা সভাপতি পদে আর কোনও বিধায়ককে রাখা হবে না। সেই জন্য কোচবিহার থেকে সুকুমার রায়কে সরানো হয়েছে। তাঁর পরিবর্তে আনা হয়েছে অভিজিৎ বর্মনকে। জলপাইগুড়িতে পাঁচ বছরের বেশি সময় জেলা সভাপতি ছিলেন বাপি গোস্বামী। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে শ্যামল রায়কে। শিলিগুড়ি জেলায় ফের অরুণ মণ্ডলের উপরেই ভরসা রেখেছে দল। মালদা উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে উজ্জ্বল দত্তকে। তাঁর পরিবর্তে আনা হয়েছে প্রতাপ সিংহকে।
কোনও বিধায়ককে যে সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করা হবে না, তা জানিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বই। তাঁদের কথায়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে। পাশাপাশি জেলা সভাপতিদের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৬০ বছর নির্ধারিত করা হয়েছিল। আর এই নিয়োগের ক্ষেত্রে দায়িত্ব ছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্ড এবং রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যের উপরে।
এ দিকে সুকান্তর পরে কে হবেন বিজেপির পরবর্তী রাজ্য সভাপতি, তা নিয়েও বিস্তর জল্পনা। দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সভাপতির ঘোষণার জন্য কমপক্ষে অর্ধেক সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নাম ঘোষণা করতে হবে। সেই দিক থেকে আর রাজ্য সভাপতি পদে নতুন নাম ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনও বাধাও থাকল না বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।