তৃণমূল পুরপ্রধানের আবেদন উড়িয়ে নবদ্বীপে দোলে আমিষ পদ বিক্রি! খোলা ছিল খাসি ও মুরগির মাংসের দোকানও
আনন্দবাজার | ১৪ মার্চ ২০২৫
তৃণমূল নেতা তথা পুরপ্রধানের আবেদন ধর্তব্যের মধ্যে আনলেন না নবদ্বীপবাসী। শুক্রবার দোল উৎসবে হোটেলে বিক্রি হল আমিষ খাবার। খোলা ছিল কসাইখানাও। যদিও তৃণমূল বিমানকৃষ্ণ সাহার দাবি, মানুষ তাঁর আবেদনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছেন।
চলতি বছরে দোল উৎসব উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৫ ই মার্চ নবদ্বীপবাসীদের আমিষ বর্জনের জন্য আবেদন করেছিলেন পুরপ্রধান বিমাকৃষ্ণ। দোলে নবদ্বীপে আসা ভক্ত, দর্শনার্থী এবং পর্যটকেরা যাতে ‘দৃশ্যদূষণের’ মধ্যে না পড়েন, সে জন্য সমস্ত কসাইখানা বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। বস্তুত, বিমানকৃষ্ণের এই নির্দেশ তাঁর দলের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থানের বিপরীত। খোদ তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে থাকেন, কে কী খাবেন, সেটা একেবারেই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। সেখানে হস্তক্ষেপ আদতে ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী। অন্য দিকে, দোলের সারাদিন নবদ্বীপ ছিল নবদ্বীপেই। আর ছ’টি দিনের মতো শুক্রবারও হোটেল, ফাস্ট ফুডের দোকানে মাছ-মাংস এবং ডিমের নানা পদ বিক্রি হয়েছে। মাছবাজারে ঢুঁ দিয়ে দেখা গিয়েছে, পরিমাণে কম হলেও যথেষ্ট বিক্রি হয়েছে মাছও। দেদার বিক্রি হয়েছে খাসি ও মুরগির মাংস। বস্তুত, বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপ তাঁর শাক্ত ধারা বজায় রেখেছে বলে অভিমত নবদ্বীপের সংস্কৃতিপ্রেমীদের। কিন্তু পুরপ্রধান তা মানতে নারাজ।
দোল উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে সম্প্রতি পুরসভার তরফে বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে বৈষ্ণব মঠের প্রধান, বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নবদ্বীপবাসীর উদ্দেশে দোলে মাছ-মাংস না খাওয়ার আবেদন করেন বিমানকৃষ্ণ। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। তাতে পুরপ্রধানকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি কোনও ধর্মকে ছোট করছি না। আমাদের হিন্দুধর্মে বিভিন্ন উৎসবে আমরা নিরামিষ খেয়ে থাকি। এটা (দোল উৎসব) চৈতন্যদেবের আবির্ভাব তিথি। এই তিথিতে এখানে চৈতন্যদেবের লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসেন। তাঁরা অধিকাংশই নিরামিষভোজী। তাঁরা এসে এই দৃশ্যদূষণের মুখে পড়বেন। দেখবেন, কেউ রাস্তার এ ধারে খাসি খাচ্ছেন, কেউ ও ধারে মুরগি খাচ্ছেন। এটা তাঁদের পক্ষে অসহনীয় হবে। সেটা মাথায় রেখেই নবদ্বীপবাসীর কাছে পুরসভার পক্ষ থেকে আমাদের আবেদন, আগামী ১৩, ১৪ এবং ১৫ মার্চ আপনারা আমিষ ত্যাগ করে নিরামিষ খান।’’ শুক্রবার বিমানকৃষ্ণ জানান, দোলযাত্রা, গৌরপূর্ণিমা এবং চৈতন্যদেবের ৫৪০তম আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে চৈতন্যভূমি নবদ্বীপে আসা পর্যটকদের কথা ভেবে তিনি ওই আবেদন করেছিলেন। তিনি মানুষের উপর কোনও নির্দেশ চাপিয়ে দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছেন। কোথাও কোথাও আমিষ খাবার বিক্রি হয়েছে। তবে সেটা বিক্ষিপ্ত ব্যাপার। এ তো হতেই পারে।’’
অন্য দিকে, নবদ্বীপ পুরসভা এলাকার ‘মা তারা হোটেল’-এর কর্ণধর রাজীব দেবনাথ জানাচ্ছেন, তাঁর আশঙ্কা ছিলই। তিনি বলেন, ‘‘আমিষ খাবার বিক্রি না-ও হতে পারে, এমনটা ভেবেছিলাম। তবে যথেষ্ট খদ্দের এসেছেন। মুরগির মাংসের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি।’’ খাসির মাংস বিক্রেতা নিশীথ মণ্ডল জানিয়েছেন, শুক্রবার ভালই ব্যবসা হয়েছে। উল্টো দিকে, পুরপ্রধানের সংযোজন, ‘‘আমরা তো কোন কিছু চাপিয়ে দিইনি। যেটা হয়েছে, মানুষ দেখেছে।’’