• রামনবমীতে এক কোটি হিন্দুকে ডাক শুভেন্দুর
    আনন্দবাজার | ১৫ মার্চ ২০২৫
  • বিধানসভায় বাজেট সংক্রান্ত আলোচনা ছাড়িয়ে বড় হয়ে উঠেছে ধর্ম-সংঘাত। এ বার বাইরেও সেই হিন্দুত্বের জিগির তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণা-ভাষণের অভিযোগে চলতি বির্তকের মধ্যেই বিরোধী দলনেতা ডাক দিলেন রামনবমীতে এক কোটি হিন্দুকে রাস্তায় নামায়। কোনও অনুমতির অপেক্ষা না-করেই রামনবমীর মিছিল করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএম।

    দোল উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘রামনবমীর উৎসব এ বার এমন ভাবে পালন করুন, যাতে হিন্দু-বিরোধী শক্তি মুখের মতো জবাব পায়! গত বার ৫০ লক্ষ হিন্দু বেরিয়েছিলেন, এক হাজার মিছিল হয়েছিল। এ বার এক কোটি হিন্দুকে রাস্তায় নামতে হবে। দু’হাজার মিছিল হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভাল করে রামনবমী করুন। আমিও ময়দানে থাকব। কোনও অনুমতি নেবেন না। প্রয়োজন নেই। হিন্দুদের উৎসব, শান্তিপূর্ণ ভাবে করার দায়িত্ব আমাদের।’’

    রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হলেও শুভেন্দু আগেই ঘোষণা করেছেন, তিনি শুধু হিন্দু ভোটে জিতেছেন। সকলের নন, তিনি শুধু হিন্দুদেরই বিধায়ক! সেই ছক মেনেই আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির হয়ে হিন্দুত্বের উনুনের আঁচ বাড়িয়ে চলেছেন শুভেন্দু। জমি আন্দোলনের সময়ে নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর বর্ষপূর্তি পালনের দিনেও বাদ যায়নি ধর্মীয় অনুষঙ্গ। নন্দীগ্রামের সোনাচুড়ায় রাম মন্দির গড়ার কথা স্থানীয় বিধায়ক শুভেন্দু আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র আয়োজনে স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘‘রবিবার থেকে নন্দীগ্রামে রাম মন্দিরের সীমানা প্রাচীর, মাটি ভরাটের কাজ শুরু হবে। সকলের সহযোগিতা চাই। আগামী ৬ এপ্রিল ভূমি পূজন হবে। অযোধ্যার রাম মন্দিরের মতো আধ্যাত্মিক পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে।’’

    আরও বড় করে রামনবমী পালনের যে ডাক শুভেন্দু দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ভোটার তালিকায় বিজেপি যে চক্রান্ত করছে, তার মোকাবিলায় সমীক্ষা চলছে। তার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উন্নয়নের কাজ এবং কেন্দ্রের অন্যায় ও বঞ্চনার প্রতিবাদ, এই দুই প্রচারে আমরা আছি। এ সবের থেকে নজর ঘোরাতে শুভেন্দু অধিকারীরা নানা কথা বলে উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছেন। বাংলার মানুষ ওঁদের বুঝে নেবেন। হার নিশ্চিত বুঝেই শুভেন্দুরা এগুলো করছেন।’’ কুণালের সংযোজন, ‘‘আমরা কোনও প্ররোচনায় পা দেব না।’’ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘ভগবানকে বলব, যাঁরা এটা করছেন, তাঁরা জানেন না কী করছেন! রাজনীতি মানুষের সেবা। ঘৃণা, বিদ্বেষ দিয়ে রাজনীতি হয় না। যাঁরা এটা করছেন, তাঁদের বলব সুস্থ মানুষ হিসেবে থাকুন।’’

    সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এক কোটি? প্রথমত, রামনবমী বাংলার পরিচিত সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। তা ছাড়া, দুর্গা পুজোয় তো আরও বেশি মানুষ শামিল হন। তাঁরা সবাই কি বিজেপি হয়ে যান? দোলে যাঁদের গায়ে রং লাগল, তাঁরা সবাই কি হিন্দু পরিচয় নিয়ে বিজেপিকে ভোট দেবেন? এ সব প্রলাপ!’’ সংখ্যালঘু বিধায়কদের ‘চ্যাংদোলা’ করে রাস্তায় ফেলার যে হুঁশিয়ারি বিরোধী দলনেতা আগে দিয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন এ দিনই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপির সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের এই অপপ্রয়াসের আমরা তীব্র নিন্দা করি এবং শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই’।

    নন্দীগ্রামে ১৪ মার্চের ‘শহিদ’ তালিকায় শুভেন্দু অবশ্য ইমদাদুল ও ইমাদুলের নামও করেছেন। সেই সঙ্গেই বলেছেন, ‘‘২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে সকলে একসঙ্গে আন্দোলন করেছিল বলে মন্দিরের মতো মসজিদ রক্ষা পেয়েছে। রক্ষা পেয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।’’ তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২ মে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর বর্ষপূর্তি পালন করবেন। বিধায়ক তহবিলের অর্থ কোন কোন খাতে খরচ করেছেন, সেই বিষয়ে পুস্তিকাও প্রকাশ করা হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)