‘মামা’ বলে ডাকত মেয়েটি, চোখের জল থামছেই না ই-রিকশা চালকের
আনন্দবাজার | ১৫ মার্চ ২০২৫
যাঁর কোলে-পিঠে চড়ে সে খেলত, তাঁর ই-রিকশাতেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে সাত বছরের শিশুর। তাই নিজেকে যেন ক্ষমা করতে পারছেন না বাগুইআটির নারায়ণতলার বাসিন্দা, সেই ই-রিকশার চালক। বৃহস্পতিবার তাঁর ই-রিকশায় উঠেই চাবি ঘুরিয়ে দিয়েছিল এলাকার বাসিন্দা সেই শিশুটি। যার জেরে ই-রিকশাটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। সেটির ভাঙা কাচে গলার নলি কেটে মারা যায় শিশুটি।
তার পর থেকে শুধুই কান্নাকাটি করে চলেছেন ই-রিকশাচালক আটকেলাল পাণ্ডে। ওই দুর্ঘটনায় মৃত সাত বছরের রিয়া কুমারীর বাড়ির পাশেই একটি ঘরে থাকেন আটকেলাল। আকস্মিক এই ঘটনায় শোকে স্তব্ধ তিনি। অন্য সকলে দুর্ঘটনার কথা মেনে নিলেও আটকেলাল অপরাধবোধে ভুগছেন। রিয়ার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলির কথা ভেবে কান্না ধরে রাখতে পারছেন না। খাওয়াদাওয়া ভুলে দিনভর দাঁড়িয়ে ছিলেন আর জি কর হাসপাতালের মর্গ চত্বরে।
আটকেলাল ও রিয়া কুমারীর পরিবারের বাড়ি বিহারের একই জায়গায়। ঠিক যেমনটা নারায়ণতলাতেও। রিয়া তাঁকে মামা বলে ডাকত। রিয়ার মা মুন্নি আটকেলালের কাছে নিজের বোনের মতো। তাই আচমকা রিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় নিজেই নিজেকে বার বার কাঠগড়ায় তুলছেন আটকেলাল। কাঁদতে কাঁদতে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রিয়া রোজই আমার দাঁড় করানো রিকশায় চেপে বসত। অন্য দিন রিকশায় চাবি ঝোলানো থাকত না। গত কাল রিকশা থেকে বস্তা নামিয়ে ফের বেরোনোর কথা ছিল। তাই আর চাবি খুলিনি। রিয়া রিকশায় চেপেছিল। কিন্তু চাবি ঘুরিয়ে দেবে, ভাবতে পারিনি। আমার নজর ছিল বস্তার দিকে। আচমকা রিকশা চলতে শুরু করে। আমি কিছু বোঝার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’’
ওই রাতে ই-রিকশা চালু করে দেওয়ার পরে সেটি সাত বছরের রিয়াকে নিয়ে চলতে শুরু করে। তার পরে সামনেই একটি ট্রান্সফর্মারে ধাক্কা মারে। তাতে ই-রিকশাটির কাচ ভেঙে যায় এবং ভাঙা কাচ গলায় বিঁধে মৃত্যু হয় রিয়ার। গোটা ঘটনাটিই ঘটে একেবারে বাড়ির সামনে।
আটকেলাল বলেন, ‘‘আমার কোলে-পিঠে চড়ত। আমি হাতে করে খাইয়ে দিতাম। আমার মোবাইল ফোন নিয়ে দেখত। আমার চোখের সামনে মুহূর্তগুলো ভেসে উঠছে। আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না। অথচ, আমার কোনও দোষ নেই। লোকজনকে ডাকতে ডাকতেই রিকশাটা গিয়ে ধাক্কা মারল। আমি একার চেষ্টায় আটকাতে পারলাম না।’’
এ দিন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার দেহের ময়না তদন্ত হয়। পুলিশ এখনও পর্যন্ত ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলেই মনে করছে। এমন একটি ঘটনাকে ঘিরে দোলের দিন রিয়ার পাড়ায় শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। প্রতিবেশীরা জানান, সে দিন প্রথমে বাবার সঙ্গেই ছিল রিয়া। রিকশায় বস্তা চাপিয়ে বাড়ির সামনে পৌঁছেছিলেন আটকেলাল। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে রিয়া রিকশায় চেপে চাবি ঘুরিয়ে দেয়।