পথে দেদার বিধিভঙ্গ বাইক থেকে গাড়ির, পুলিশ স্রেফ ‘দর্শক’
আনন্দবাজার | ১৫ মার্চ ২০২৫
রবীন্দ্র সদনের সামনে সিগন্যালে পর পর দাঁড়ানো প্রতিটি মোটরবাইকের পিছনেই একাধিক সওয়ারি। সকলেই চিৎকার করছেন। আর মাঝেমধ্যে গানের তালে তাল মিলিয়ে আকাশে আবির উড়িয়ে দিচ্ছেন। রং মেখে ‘ভূত’ হওয়া এঁদের কারও মাথাতেই হেলমেটের বালাই নেই। কয়েক সেকেন্ড বাদে সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হতেই বেসামাল হাতে প্রতিযোগিতায় ছোটার কায়দায় দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেল বাইকগুলি। থানার সামনে সাদা পোশাকে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা থাকলেও কাউকেই কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা গেল না।
দোল এবং হোলিকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনার পাশাপাশি ট্র্যাফিক বিধি ভাঙা আটকাতে ২৮০০ জন পুলিশকর্মীকে রাস্তায় নামানোর কথা জানিয়েছিল লালবাজার। বিধি-ভঙ্গে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও পুলিশি তৎপরতার সেই ছবি চোখে পড়ল না। উল্টে, প্রতি বছরের মতো এ বছরও পথের বিধি ভাঙার দেদার ছবি নজরে পড়ল। কোথাও বাইকের পিছনের সিটে একাধিক জনকে বসিয়ে বিনা হেলমেটে ছুটতে দেখা গেল। কোথাও আবার দেখা গেল, মত্ত অবস্থায় নড়বড়ে হাতে বাইক ছোটাতে।
গাড়ির দৌরাত্ম্যও চোখে পড়েছে দোলের বেলা বাড়তেই। গাড়ির ভিতরে তারস্বরে গান চালিয়ে, হইহুল্লোড় করতে করতে তীব্র গতিতে ছুটে যেতে দেখা গিয়েছে ই এম বাইপাসে। রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই কেউ বলেছেন, ‘‘ক্যামেরা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’, কেউ আবার গম্ভীর গলায় উত্তর দিয়েছেন, ‘‘দেখছেন, গাড়ির গতি! আপনার কি মনে হয়, পুলিশ সামনে গেলেও ওরা থামবে?’’ পথের বিধি ভাঙার এমন ছবি যদিও শুধু ই এম বাইপাসে নয়, উল্টোডাঙা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ডায়মন্ড হারবার রোড, এপিসি রোড-সহ শহরের কার্যত সর্বত্রই দেখা গিয়েছে।
সকালের দিকে তুলনায় ফাঁকা রাস্তায় বিধি ভাঙার ছবি নজরে না এলেও বেলা বাড়তেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বাইকের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে তাল মেলায় বেপরোয়া গাড়ি। এ দিন ধর্মতলার মোড় হয়ে বাইকের পিছনে একাধিক জনকে বসিয়ে লেনিন সরণি ধরে যাচ্ছিলেন বছর ত্রিশের এক যুবক। পথের বিধি নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ‘‘দোলের দিন ওই সব নিয়মকানুন চলে নাকি! আর রং খেলতে বেরিয়ে যদি হেলমেটে মাথা ঢাকি, তা হলে সবাই আমাকে রং মাখাবে কী করে?’’ একই সুর শোনা গেল কসবা কানেক্টরে বিধি না মানা এক যুবকের গলাতেও। তিনি বললেন, ‘‘উৎসব মানে সবেতে ছাড়। এ বছরও কেউ আটকায়নি, কেউ আটকাবে না।’’
লালবাজার যদিও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করেছে। রাস্তায় পুলিশ সক্রিয় ছিল বলেও দাবি। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘যেখানে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেখানে সে ভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দু’-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, কিন্তু মোটের উপরে পুলিশ সক্রিয় থেকেই শহর সামলেছে।’’ এ দিন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও বিধি ভাঙার অভিযোগে ১৬১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৩৩ লিটার মদ।