গল্প হলেও সত্যি! শ্যাওলা ধরা উঠোনকে ‘প্লে গ্রাউন্ড’ বানিয়ে খেলবে পুলিশ
প্রতিদিন | ১৫ মার্চ ২০২৫
অর্ণব আইচ: উঠোনটা দেখলেই মনে পড়ে যেত ‘গল্প হলেও সত্যি’ সিনেমার সেই দৃশ্য। যেখানে শ্যাওলাধরা উঠোনে নামতেই পিছলে যাচ্ছে পা। নতুন পরিচারক ধনঞ্জয় দু’টি নারকেলের মালা জোগাড় করতেই হয়ে গেল কেল্লাফতে। দুই হাত দিয়ে খড়খড়ে নারকেলের মালা দিয়ে উঠোন ঘষতেই উঠে গেল শ্যাওলা। এমনকী, সে বার কয়েক লাফিয়েও দেখিয়ে দিল যে, আর উঠোনে নামলে পিছলে পড়তে হবে না। উঠোন ধরে সোজা হেঁটে বাড়ির এপার ওপার করা যাবে। অথচ এই সামান্য সহজ উপায়টুকুও বহু বছর ধরেও পরিবারের কারও মাথায় আসেনি। এবার ওই উঠোনই হয়ে উঠবে প্লে গ্রাউন্ড।
টালিগঞ্জে পুলিশ আবাসন চত্বরেই ডিসি (সাউথ ওয়েস্ট ডিভিশন) তথা বেহালা ডিভিশনের অফিস। এর আগে ডিসি (এসএসডি)-র দপ্তরও ছিল এই জায়গায়। বহুতলের মাঝখানে বিপুল মাপের উঠোন। জায়গাটি দেখে ‘গল্প হলেও সত্যি’র সেই উঠোনের কথাই মাথায় আসত। শ্যাওলাধরা নোংরা জায়গা। হাঁটতে গেলেই পিছলে যেত পা। তাই কেউ সেখানে হাঁটতেন না। বর্ষাকালে জমে যেত জল। আর সেই জলে ডিম পাড়ত মশা। ডিউটি করবেন কী, মশার কামড়ে প্রাণান্তকর অবস্থা হত পুলিশকর্মীদের। সবাই দেখতেন। কিন্তু কেউ মাথা ঘামাতেন না। এবার মাথা ঘামালেন এক পুলিশকর্তা। আর তাঁরই প্রচেষ্টায় সেই নোংরা উঠোন হয়ে উঠছে রীতিমতো ‘প্লে গ্রাউন্ড’, ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টন কোর্ট। ঝকঝকে পরিষ্কার সেই উঠোন দেখে কে বলবে যে, মাস কয়েক আগে ওই উঠোনে পা দিতে গেলেও অস্বস্তি হত।
জানা গিয়েছে, ওই উঠোনটি কোনও কাজে লাগানো যায় কি না, কয়েক মাস আগে থেকেই তা ভাবতে শুরু করেছিলেন পুলিশকর্তারা। তাঁরা দেখেন, ডিউটি চলাকালীনই কাজের চাপ কম থাকলে অনেকে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করেন। আবার ডিউটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরই বাড়ি যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেক পুলিশকর্মী। সকাল থেকে সন্ধ্যা বা রাত পর্যন্ত কাজের চাপ থাকায় অনেক পুলিশকর্মীরই স্বাস্থ্যচর্চা বা খেলাধুলো করা হয়ে ওঠে না। অথচ খেলাধুলোর প্রয়োজনও যে রয়েছে।
তাই এই ‘অপ্রয়োজনীয়’ উঠোনটিকেই ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন কোর্টে পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করেন ডিসি (এসডব্লুডি) রাহুল দে। তিনি নিজেই লালবাজারে এই ভলিবল ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট তৈরির প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়েই দেখেন লালবাজারের কর্তারা। লালবাজার ওই কোর্ট তথা প্লে গ্রাউন্ড তৈরির জন্য এক লাখ টাকা খরচ করতেও রাজি বলে জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই উঠোনটি সাফ করা হয়েছে। সেখানে আর নোংরার কোনও চিহ্ন নেই। সিমেন্ট দিয়ে জায়গাটি মসৃণ করা হয়েছে। নর্দমা তৈরি করে বৃষ্টির জল নিকাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে পুলিশকর্মীরা খেলাধুলাও করেছেন। এবার ওই জায়গায় সিমেন্টের উপর স্ল্যাব বসানো হবে। পুরোদস্তুর কোর্ট তৈরির পর নিয়ম করে সেখানে খেলাধুলো করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।