• কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণে শিল্পাঞ্চলে জমা জলের সমস্যা বৃদ্ধি পাবে, জট কাটাতে বৈঠক
    আনন্দবাজার | ১৫ মার্চ ২০২৫
  • কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণের কাজ পুরোদমে চলছে, যা কলকাতা বিমানবন্দর থেকে কল্যাণী এমস পর্যন্ত যাত্রা দ্রুত ও স্বছন্দ করে তুলবে। প্রকল্পটি শেষ হলে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে কল্যাণী এমস পৌঁছোনো যাবে ৪৫ মিনিটে, যা বর্তমানে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লাগে। নিত্যযাত্রী ও পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও সুবিধা মিলবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ঘিরে পরিবেশ ও নিকাশি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বর্ষার মরসুমে জমা জল। সেই সমস্যা চিরতরে দূর করতে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।

    কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণের ফলে রাস্তার দু’পাশের এলাকায় বৃষ্টির জল জমে থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষত পানিহাটি, ভাটপাড়া, ব্যারাকপুরের ওয়ারলেস মোড়, নৈহাটির রাজেন্দ্রপুর জংশন, মুড়াগাছা জংশন ও ঘোলা বাজারের মতো অঞ্চলে বর্ষার সময় জল জমার সমস্যা তীব্র হতে পারে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে বৃহস্পতিবার বিধানসভার প্লাটিনাম জুবিলি মেমোরিয়াল প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক-সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। বৈঠকে মূলত নিকাশি পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

    সরকার নিকাশি সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, রাস্তার পাশে অবস্থিত জলাশয়গুলির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, সংলগ্ন পুরসভাগুলিকে উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। বর্ষার মরসুমে জমা জল নিষ্কাশনের জন্য মোটর পাম্প বসানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণের কাজ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে নিমতা থেকে মুড়াগাছা পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়াও, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েকে সংযুক্ত করতে একটি এলিভেটেড করিডর নির্মাণ করা হচ্ছে।

    দ্বিতীয় পর্যায়ে মুড়াগাছা থেকে কাঁপা পর্যন্ত ৩০.৪৯ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হবে। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে হুগলি-কল্যাণী সংযোগকারী ঈশ্বর গুপ্ত সেতুর নির্মাণে কিছুটা অতিরিক্ত সময় নিতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার মধ্যে সংযোগ আরও সুগম হবে। কল্যাণী এমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দ্রুত পৌঁছোনোও যাবে। রাজ্য সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জাতীয় সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশের এলাকাগুলি রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের কাঁধে। তাই জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষের জনজীবন যাতে বিপর্যস্ত না হয় সেই কারণেই চলতি বছরেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে চায় নবান্ন। এ ছাড়া আগামী বছর বিধানসভা ভোট। এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণের পর যদি জল জমার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, তার প্রভাব পড়তে পারে ভোটবাক্সে। তাই সব দফতরকে সংযুক্ত ভাবে ওই এলাকার নিকাশির উন্নয়নে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই নবান্ন সূত্রে খবর।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)