• বাঁকুড়ায় জমজমাট বাহা পরব, ধামসার তালে মাতোয়ারা আদিবাসী সম্প্রদায়
    এই সময় | ১৬ মার্চ ২০২৫
  • বসন্ত মানেই রঙের উৎসব। তা শুধু মানব জীবনে নয়, প্রকৃতিও সেজে ওঠে রঙিন ছোঁয়ায়। তেমনই বাঁকুড়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক অন্যতম উৎসব বাহা পরব। শাল ও মহুয়ার নতুন ফুল ও পাতা দিয়ে মারাং বুরুর পুজো করা হয় এই পরবে। সঙ্গে ধামসা মাদলের তালে আদিবাসী নাচ। শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে রবিবার পর্যন্ত চলবে এই পরব।

    জানা গিয়েছে, ‘বাহা’ শব্দের অর্থ ফুল। বসন্তে সমস্ত গাছ নতুন পাতা, ফুলে সেজে ওঠে। সেই পাতা ও ফুল দিয়েই প্রকৃতির পুজো করে আদিবাসী সম্প্রদায়। একেই বলা হয় বাহা পরব। সাধারণত তিন দিন ধরে এই উৎসব পালন হয়ে থাকে। আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী প্রথম দিনটিকে বলা হয় ‘উম’ অর্থাৎ শুভ সূচনা। দ্বিতীয় দিনটি হলো ‘সারদি মাহা’ মানে মূল পুজো। এই উৎসবের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ দিনকে বলা হয় জালে ‘মাহা’ বা বাহা বাস্কে। দোল পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে দেখা দেওয়ার পর এই উৎসব উদযাপন করে থাকেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। এই পরবে নতুন শাল ফুল মেয়েরা খোঁপায় এবং ছেলেরা কানে লাগিয়ে এক সঙ্গে মেতে ওঠে মারাং বুরুর পুজোয়। সঙ্গে থাকে ধামসা মাদলের বোল।

    বর্তমানে বাঁকুড়ায় প্রবেশ করছে শহুরে হাওয়া। তা সত্ত্বেও চম্পাকিয়ারীর আদিবাসী সম্প্রদায় এখনও ধরে রেখেছে নিজেদের ঐতিহ্য আর পরম্পরা। শুধু তাই নয়, নব প্রজন্মের মধ্যেও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে বছরভর নানান উদ্যোগ নেন তাঁরা। সেই ধারাবাহিক কর্মসূচীর একটি অঙ্গ হলো ‘বাহা পরব’।

    বাঁকুড়ার এক নার্সিং পড়ুয়া শিলি মুর্মু বলেন, ‘আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাঁকুড়ার এই শহুরে পরিবেশেই। তবে আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি কখনও ভুলে যায়নি। বছরের বিশেষ দিনগুলিতে সকলের সঙ্গে আমরাও আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠি।’

    বাঁকুড়ার চম্পাকিয়ারী গ্রামের এক বাসিন্দা মলিন্দ হাঁসদা বলেন, ‘‘বাহা’ শব্দের বাংলা অর্থ ফুল। বসন্তের সূচনায় এই উৎসব পালিত হয়। শাল, মহুয়া-সহ সমস্ত গাছে নতুন ফুল, ফল, পাতা যতক্ষণ পর্যন্ত আরাধ্য দেবতা মারাং বুরু-কে সমর্পণ না করা হচ্ছে, তত দিন কেউ ফুল, ফল, পাতা ব্যবহার করতে পারে না।’

  • Link to this news (এই সময়)