• স্মৃতিশক্তি কমছে পুলিশের! রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
    এই সময় | ১৬ মার্চ ২০২৫
  • গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ হানা দিল, মাদক মামলার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল, তাদের নাম–ধাম–ঠিকানা জোগাড় করে মামলাও সাজাল! অথচ ট্রায়ালের সময়ে সেই পুলিশই ওই ধৃতকে চিনতে পারছে না! এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাদক পাচার সংক্রান্ত মামলায় এমন একগুচ্ছ অভিযোগ যে ভাবে সামনে আসছে, গত বছরই তাকে ‘ভয়ঙ্কর প্রবণতা’ বলে চিহ্নিত করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এটা পুলিশের ‘স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া’ নাকি ‘দুষ্কৃতীদের না–চেনার ভান’— তা নিয়েও হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলে।

    একের পর এক এমন মামলা সামনে আসার পরে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে সতর্ক করে ওই পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথাও বলেছিল আদালত। তেমনই হাফডজন মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে গত সপ্তাহে রিপোর্ট তলব করল বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।

    মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ও লালগোলা থানা, নদিয়ার ভীমপুর, মালদার ইংলিশবাজার, উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার মতো থানার বিরুদ্ধে গত বছরের প্রথম থেকে একই রকম অভিযোগ আসছিল হাইকোর্টের কাছে। সেই সময়ে একটি মামলায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি একের পর এক মাদক মামলায় লক্ষ্য করেন, প্রায় সব ক্ষেত্রেই যে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে, সেই পুলিশই ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে অভিযুক্তকে চিনতে অস্বীকার করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ— মূল সাক্ষী পুলিশই যদি ধৃতকে না–চিনতে পারে, তা হলে অভিযুক্তকে দোষী প্রমাণের সুযোগ কার্যত শেষ হয়ে যায়।

    এই অবস্থায় আদালত আরও লক্ষ্য করে, গত বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে ৭ মার্চের মধ্যে এমন সাতটি মামলা আদালতের সামনে এসেছে, যেখানে সব ক্ষেত্রে একই অভিযোগ। প্রথমে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারদের ওইসব থানার অভিযু্ক্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরবর্তীতে বিচারপতি বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ গোটা ঘটনাক্রমে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত রয়েছে বলে জানিয়ে দেয় রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। এমন ভাবে পুলিশ অভিযুক্তদের না–চিনতে পারলে, জামিন বা আগাম জামিন পাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হয় অভিযুক্তদের।

    আদালতের আরও জোরালো যুক্তি— ‘পুলিশের স্মরণ শক্তি যদি এতই কমে যায়, তা হলে ওই সব পুলিশ অফিসারের চাকরির যোগ্যতাও থাকে না।’ পুলিশের মধ্যে এমন প্রবণতা যাতে না–ছড়িয়ে পরে, তা নিশ্চিত করতে ডিজিপিকে আদালত নির্দেশ দেয়, রাজ্যের কোনও থানায় এমন ঘটনা দেখলেই, শৃঙ্খলাভঙ্গ, বিভাগীয় পদক্ষেপ–সহ কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই মামলা বর্তমানে বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন।

    বিচারপতি বসাকই বছর দুয়েক আগে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে বসে এমন একগুচ্ছ মাদক মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে অভিযুক্তদের জামিন পাইয়ে দেওয়ার একটি বড় চক্র সামনে আনেন। সেই ঘটনায় রাজ্যকে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। মামলাকারীদের তরফে নভনীল দে বলেন, ‘সবক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। রাজ্য হাইকোর্টের ওই রায় সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করলেও তাতে কোনও রায় এখনও হয়নি। এই অবস্থায় হাইকোর্ট কোন কোন মামলায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। ২৪ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি।

  • Link to this news (এই সময়)