রীতিমতো চৌকি পেতে জবরদখল করা হয়েছে ফুটপাত। ফলে হাঁটাচলা করা দায়। অভিযোগ, সেখানেই চলছে নেশার আসর। নেশার সামগ্রীর দেদার হাতবদলও হচ্ছে। এমনকি, বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারের নীচে রীতিমতো আগুন জ্বালিয়ে বিপজ্জনক ভাবে চলছে রান্না। উত্তর কলকাতার শতাব্দী-প্রাচীন রামমোহন গ্রন্থাগারের সামনে এই মুহূর্তে এমনই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ।
এই ভবনটি কলকাতা পুরসভার ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজ তালিকাভুক্ত। ভিতরে রয়েছে নানা দুষ্প্রাপ্য বই, ভিনাইল রেকর্ড প্লেয়ার, রেকর্ডিং ক্যাসেট। রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে জগদীশচন্দ্র বসু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস-সহ প্রমুখের উপস্থিতিধন্য গ্রন্থাগার এবং হল। কিন্তু এমন ঐতিহাসিক স্থলের এই অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত এবং উত্তর কলকাতার স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, ‘‘এমন ঐতিহাসিক স্থলের মর্যাদা রক্ষার দিকে কি তবে প্রশাসনের কোনও নজর নেই?’’
‘রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমের’ কোষাধ্যক্ষ সজল মিত্র শনিবার বলেন, ‘‘১৯০৪ সালে রামমোহন রায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই গ্রন্থাগার। কিন্তু গত ছ’মাস ধরে এমন সাংঘাতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লোকেরা হল এবং রিডিং রুমে প্রবেশের পথ জবলদখল করে রেখেছে। প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় এখানে বসে নেশা করছে কেউ কেউ। হল লাগোয়া বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারের নীচে আগুন জ্বেলে রান্না হচ্ছে! বহু দুর্মূল্য সামগ্রী রয়েছে গ্রন্থাগারে। কোনও ভাবে আগুন লাগলে কী হবে?’’ গ্রন্থাগারের সভাপতি, চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, পরিস্থিতি নিয়ে নারকেলডাঙা থানার পাশাপাশি স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগুন জ্বেলে রান্নার বিষয়টি জানানো হয়েছে সিইএসসি-কেও।
প্রসঙ্গত, এর পরে শনিবারই পুলিশ সেখানে গিয়ে দখল-মুক্তির অভিযান চালায়। কয়েক জনকে সেখান থেকে সরানো হয়েছে বলে দাবি। যদিও এর পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। স্থানীয় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি অয়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লাইব্রেরির তরফে জানানোর আগেই বিষয়টি আমার নজরে পড়েছিল। পুলিশকে জানিয়েছি, পুলিশ কাজও শুরু করেছে।’’