এই সময়: তৃণমূলের জন্মের পর থেকে ধরলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোড়াফুল তাদের ইতিহাসে সেকেন্ড বেস্ট রেজ়াল্ট করেছিল। রাজ্যের ২৯টি লোকসভায় জোড়াফুল জয়ী হলেও বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে বিজেপি ৯০টি, কংগ্রেস ১১টি এবং সিপিএম একটি কেন্দ্রে লিড নিয়েছিল।
বিরোধীপক্ষ এই যে ১০২টি বিধানসভা লিড নিয়েছিল, তার নেপথ্যে তৃণমূলের সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতাদের একাংশের মধ্যে কোন্দল, প্রচারে অনীহা, নিষ্ক্রিয়তা–সহ একাধিক কারণ রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের সর্বস্তরের সাংগঠনিক নেতৃত্ব ও জনপ্রিতিনিধিদের নিয়ে শনিবার দু’ঘণ্টার ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক একের পর এক বিধানসভা ধরে ধরে কোথায় কী দুর্বলতা, খামতি, কোন্দল রয়েছে, তা চিহ্নিত করেছেন।
তিনি এমনও মনে করেন যে, এই খামতি না–থাকলে শুভেন্দু অধিকারীর গড় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রেও জোড়াফুল জয়ী হতে পারত। অধিকারী পরিবারের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি কাঁথিতে ’২৪–এ সৌমেন্দু অধিকারী ৪৭ হাজারের সামান্য বেশি ভোট জয়ী হয়েছেন। এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভগবানপুর, এগরা, কাঁথি দক্ষিণের মতো বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল নেতারা আর একটু মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে জোড়াফুল জয়ী হতো বলেও অভিষেক মনে করছেন।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘আমরা যদি আর একটু পরিশ্রম করতাম, তা হলে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হতে পারতাম।’ তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, কোন্দলের কারণে তমলুক ও কাঁথি দু’টি কেন্দ্রে বিজেপি জয়ী হয়েছে বলেও অভিষেক মনে করছেন।
এই জেলার দুর্বল বুথগুলিতে বাড়তি নজরদারি করার পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি সাংগঠনিক জেলাতেই নেতৃত্ব বদল হবে বলে অভিষেক এ দিনের বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ, আগামী দিনে জেলা কমিটিকে মাসে একটি, ব্লক কমিটিতে দু’টি এবং অঞ্চল কমিটিকে চারটি বৈঠক করতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে খড়্গপুর ও মেদিনীপুর বিধানসভার ফলাফল নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এই ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, ‘অভিষেক ’২৪–এর রেজ়াল্টের ভিত্তিতে অন্তত ৫০টি–র বেশি বিধানসভার ফলাফল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। কারণ, আমরা কেউই গুনে নোট করতে পারিনি সবক’টি বিধানসভার নাম।’ বলা বাহুল্য, এ দিনের বৈঠকে যাবতীয় নথি, স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে বসেছিলেন অভিষেক এবং তার ভিত্তিতেই আগামীর রোডম্যাপ তিনি ঠিক করে দেন।
সূত্রের খবর, অভিষেক এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২৪ সালের ভোটে কলকাতায় তৃণমূলের জয়জয়কার হলেও জোড়াসাঁকো, চৌরঙ্গি, শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রে কেন জোড়াফুলের প্রত্যাশিত ফলাফল হয়নি? তৃণমূলের নেতাদের কোন্দলের কারণেই মালদা জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে এ বারেও জোড়াফুল ফুটতে পারেনি বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য।
এই কোন্দলের সুযোগ নিয়ে একটি কেন্দ্রে কংগ্রেস, অন্য কেন্দ্রে বিজেপি জয়ী হয়েছে বলে অভিষেক মনে করছেন। এই কোন্দল যে আগামী দিনে বন্ধ করতেই হবে, সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের শেষ সাংগঠনিক রদবদলের সময়ে নতুন মুখ দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মতুয়া প্রভাবিত এই সাংগঠনিক জেলার একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে জোড়াফুলের ফলাফল নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিষেক।