দিগন্ত মান্না, পূর্ব মেদিনীপুর
তাপসী মণ্ডল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পূর্ব মেদিনীপুরে ব্যাকফুটে বিজেপি। তাপসীর দলত্যাগের পর অন্য দল থেকে আসা লোকজনদের দলীয় পদে বসানো নিয়ে সরব হচ্ছেন জেলার পুরোনো বিজেপি নেতা–কর্মীরা। নিচুতলার নেতা–কর্মীদের বক্তব্য, ‘ভাড়াটে সৈনিক’দের (অন্য দল থেকে আসা নেতা) গুরুত্ব দিতে গিয়ে আখেরে কোনও লাভ হয়নি।
উল্টে দলের আদি নেতাদের পিছনের সারিতে রাখার জেরে সংগঠনই দুর্বল হয়েছে এই জেলায়। এ নিয়ে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে দেখে তড়িঘড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি বদল করল বিজেপি। নিয়ে আসা হল বিজেপির পুরোনো দুই মুখকে। জেলার রাজনৈতিক মহলের মতে, লড়াইয়ের ময়দানে আদি বিজেপিকে এগিয়ে রেখে বিধানসভা ভোটের আগে দলে এখন ভাঙন আটকানোর চেষ্টায় মরিয়া গেরুয়া শিবির।
২০২০ সালে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন হলদিয়ার তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তাপসী বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হন। ২০২৩ সালে তাপসীকে তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করে বিজেপি। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর হাত ধরেই তৎকালীন তৃণমূল নেতা অরূপকুমার দাস বিজেপিতে যোগ দেন।
২০২৩ সালে অরূপকে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়। অন্য দল থেকে এসে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার তিন বছরের মধ্যে তাপসী এবং অরূপকে জেলা সভাপতির পদে বসানোর ঘটনায় দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন আদি বিজেপির নেতা–কর্মীরা। সম্প্রতি তাপসী তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেই ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। অন্য দল থেকে আসা নেতাদের ‘ভাড়াটে সৈনিক’ বলে কটাক্ষও করেছেন আদি নেতা–কর্মীরা।
সেই ক্ষোভ আঁচ করেই দু’টি সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি পদে পুরোনো দুই নেতাকে আনা হল। তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে মলয় সিনহাকে। অন্য দিকে, কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে সোমনাথ রায়কে। পেশায় আইনজীবী মলয় এক সময়ে বিজেপির পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতি ছিলেন। সোমনাথ রায় পেশায় একজন শিক্ষক। দলের পুরনো নেতা।
সোমনাথও একসময় জেলা সভাপতি ছিলেন। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর অন্য দল থেকে আসা নেতারা দলের গুরুত্বপূর্ণ সব পদ পেয়ে যান বলে দলেই অভিযোগ রয়েছে বিজেপির অন্দরে।
দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘দলের এটা আরও অনেক আগে বোঝা উচিত ছিল। দলের গাইডলাইন, নীতি, আদর্শ মেনে চলা কর্মীদের দলীয় সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া উচিত। মাঝখানে দল বিব্রত হয়ে কিছু কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে। তার ফল ভোগ করছে। সে সময় দল অন্য দল থেকে আসা লোকজনদের পাওয়ারফুল ভেবেছিল। বেনোজলের মতো সে সময় যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা ভেবেছিলেন, এখানে এসে উপার্জন করতে পারবেন। যখন দেখছেন এখানে ব্যবসা করা যাবে না তখন চলে যাচ্ছেন।’