• বাঁ চোখ হারিয়েও অরণ্য ছাড়েননি গোরুমারা জঙ্গলের বনকর্মী ফাগু
    এই সময় | ১৬ মার্চ ২০২৫
  • অর্ঘ্য বিশ্বাস, গোরুমারা

    বাঁ চোখ পুরোপুরি নষ্ট। ডান চোখই ভরসা। তার উপর নির্ভর করেই বন দপ্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গোরুমারা জঙ্গলের বুধুরাম বিটের বনকর্মী ফাগু ওঁরাও। ২৫ বছরের বেশি সময়ের কর্মজীবনে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। তবু অরণ্য ছেড়ে যাননি। অসুস্থ হয়েও কর্মক্ষেত্রে প্রত্যাবর্তন করেছেন ফাগু।

    ময়নাগুড়ি ব্লকের শেষ সীমানায় রামসাই। গোরুমারা জঙ্গল ঘেঁষা এই এলাকায় মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান। হাতি, বাইসন, গন্ডার, চিতাবাঘ, বুনো শূকরের আনাগোনা লেগেই থাকে এখানে। গোরুমারা জঙ্গল ঘেঁষা বুধুরাম বনবস্তির বাসিন্দা ফাগু ওঁরাও। জীবনকে বাজি রেখে জঙ্গল পাহারা দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। সালটা ১৯৯৮–৯৯ হবে। বনে টহলদারির সময়ে আচমকা একদল বুনো শূকরের মুখোমুখি হয়ে পড়েন বনকর্মীরা। ফাগু বলেন, ‘অন্যরা ছুটে পালিয়ে যায়। আমিও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পালাতে পারিনি।’

    আমাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। মৃত্যুর ভয় করি না। তাই সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছিলাম

    ফাগু ওঁরাও, বনকর্মী

    শূকরের আক্রমণে আহত ফাগুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান বনকর্মীরা। আর্থিক প্রতিকূলতার দরুণ উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। এক চোখে সম্পূর্ণভাবেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ফাগু। চোখের একাংশের পাশাপাশি হাত, পা, কোমরের বিভিন্ন জায়গাতে ক্ষত তৈরি হয়। ঘটনার কয়েকমাস পরে কিছুটা সুস্থ হন ফাগু। হাঁটাচলা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলে জঙ্গল সুরক্ষার কাজে যোগ দেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। মৃত্যুর ভয় করি না। তাই সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছিলাম। ফের জঙ্গলে কয়েকবার বুনো হাতি ও গন্ডারের সামনে পড়ে গিয়েছিলাম।’

    ফাগুর শরীর এতটা ধকল নিতে পারছিল না। তাই ফের তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের মতোই খারাপ হয়ে পড়ে। দু’বছরের বেশি সময় ধরে হাঁটাচলা বিশেষ করতে পারেন না তিনি। তাই জঙ্গলের ভিতরে নজরদারির পরিবর্তে বন দপ্তর ফাগুকে বিট অফিস চত্বর দেখভালের কাজে নিযুক্ত করেছে। এখন জঙ্গলের মধ্যেই গোরুমারা সাউথ রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত বুধুরাম বিট অফিস চত্বরেই একটা কাঠের আবাসনে থাকেন তিনি। বিট অফিস চত্বর সাফাই–সহ যাবতীয় কাজকর্ম করেন।

    ফাগু বলেন, ‘আগের মতো শরীরে খুব একটা বল পাই না। লাঠিতে ভর করেই কোনও মতে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে।’ পরিবারে স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে ফাগুর। ছেলে–মেয়েরা স্কুলে পড়াশোনা করছে। স্ত্রী রবিতা ওঁরাও বলেন, ‘এক চোখে দৃষ্টি হারানোর পরে এখন কানে ঠিক মতো শুনতে পান না। অফিস চত্বরেই ডিউটি সারেন, বাইরে খুব একটা যান না।’

    বুধুরাম বিটের বিট অফিসার সুরজিৎ ওঁরাও বলেন, ‘শারীরিক সমস্যার জন্য এখন জঙ্গলের ভিতরে ফাগুকে যেতে দেওয়া হয় না। বিট অফিস চত্বর দেখভাল করেন।’ গোরুমারার প্রাক্তন বনকর্তা বিমল দেবনাথ বলেন, ‘বন ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় থাকা বনকর্মীদের এ রকম অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়, ফাগুরও সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই বনাঞ্চলে এমন আরও ঘটনা আছে।’

  • Link to this news (এই সময়)