ভবানীপুরে মমতার হার চান শুভেন্দু, পালটা সারা পূর্ব মেদিনীপুর জেতার কৌশল অভিষেকের
হিন্দুস্তান টাইমস | ১৬ মার্চ ২০২৫
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে দ্বৈরথে নেমেছিলেন দুই হেভিওয়েট। সেই নির্বাচনী লড়াইয়ে শেষমেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে পরাজিত করে জয়ী হওয়া শুভেন্দু অধিকারীর জয় নিয়ে আজও তৃণমূল কংগ্রেস নানা প্রশ্ন তুললেও, ওই একটি ঘটনা শুভেন্দুর আত্মবিশ্বাস বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এহেন শুভেন্দু বর্তমানে মন দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে। গত কয়েকদিন ধরে বহুবার তাঁকে নানাভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি যেমন নন্দীগ্রামে মমতাকে হারিয়েছিলেন, আসন্ন ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে সংশ্লিষ্ট বিজেপি প্রার্থী ফের একবার নাকি সেভাবেই তৃণমূল সুপ্রিমোকে পরাজিত করবেন।
সূত্রের দাবি, রীতিমতো অঙ্ক কষে মমতাকে তাঁরই গড়ে হারাতে ভবানীপুরের মাটি কামড়ে পড়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এহেন অবস্থায় তৃণমূল কি হাতে হাত দিয়ে বসে থাকবে? মোটেই না। ছাব্বিশের নির্বাচনে মমতাকে ভবানীপুরে হারানোর যে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দু করেছেন, তারা যে তাতে আমল দিতে নারাজ, সেই বার্তা ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেতৃত্ব দিয়েছে। সেইসঙ্গে, পালটা শুভেন্দু অধিকারীর গড়েই ঘাসফুলের শিকড় আরও দৃঢ় করার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
শনিবার এক বিরাট ভার্চুয়াল সভা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। খাতায়-কলমে ভুয়ো ভোটার চিহ্নিতকরণ ও ভোটার তালিকা সংশোধন এই সভার মূল উদ্দেশ্য় হলেও আসলে এই সভা ছিল ছাব্বিশের ভোটে তৃণমূলে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা ও তার রণকৌশল নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করার বৈঠক।
শনিবারের এই বৈঠকে মালদা, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট ছাড়াও যে জেলা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন অভিষেক, সেটি হল পূর্ব মেদিনীপুর। যে জেলার বিধায়ক শুভেন্দু নিজে। অভিষেকের সাফ কথা - আগামী নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ১২টি আসনে ঘাসফুল ফোটাতেই হবে। উল্লেখ্য, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে এই জেলার দু'টি আসনেই পরাজিত হতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। অভিষেক মনে করেন, এর জন্য দলের কোন্দলই দায়ী!
শুধু তাই নয়, কাঁথিতে পরাজয় নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপের সুর শোনা গিয়েছে অভিষেকের গলায়। তিনি বলেছেন, 'পূর্ব মেদিনীপুরে দু'টি আসনে আমরা হেরেছি। আর একটু জোর দিলে কাঁথি আমরা জিততাম।'
এই জেলায় রীতিমতো বুথ ধরে ধরে বিশ্লেষণ করেছেন অভিষেক। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভোটের আগে কীভাবে মানুষের কাছে দলের হয়ে প্রচার করতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে আগেও বিজেপি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। আবার যদি তেমনটা ঘটে, তাহলে তিনি নিজে এজেন্সির নিশানায় থাকা দলীয় নেতা ও কর্মীদের পাশে থাকবেন। তাঁর কথায়, 'আমি পাশে থাকব। আগেও ছিলাম। হাইকোর্টে গিয়ে আইনি স্বস্তি দিইনি?'
পাশাপাশি অভিষেক উল্লেখ করেছেন, তমলুক, কাঁথি, চণ্ডীপুরের মতো বেশ কিছু জায়গায় দলের ফল ভালো হয়নি। সেটা সংশোধন করতে হবে। আবার, যে এলাকাগুলিতে ফল ভালো হয়েছে, সেখানকার নেতা ও কর্মীদের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
শনিবার দলীয় সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে অভিষেককে বলতে শোনা যায়, 'কাঁথি তমলুকের দু'টো আসন বিজেপি জিতেছে। কিন্তু, ওই দুই সাংসদ দিল্লি থেকে কিছুই আনতে পারেননি। বরং, দিল্লির রাজনৈতিক প্রভুদের খুশি করতে ব্যস্ত। মানুষকে একথা বোঝাতে হবে।' তাঁর প্রশ্ন, 'রাজ্য সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছে, স্বাস্থ্যসাথী দিচ্ছে। আর বিজেপি তো দেবে বলেও দিল্লি আর মহারাষ্ট্রে এখনও দিচ্ছে না। মানুষ একথা বুঝবে না?'
শনিবারের বৈঠকে অভিষেকের এই সমস্ত কথা থেকেই স্পষ্ট, একদিকে যখন শুভেন্দু অধিকারী মমতাকে তাঁর কেন্দ্রে হারানোর জন্য হিসাব কষছেন, উলটোদিকে ঠিক সেই সময়েই অভিষেক শুভেন্দুর প্রায় গোটা জেলাজুড়েই জোড়াফুল ফোটানোর জন্য ঘুঁটি সাজাচ্ছেন!