• কবীর সুমন আমার জীবনের আলো, ওঁর গান শুনে বড় হয়েছি, ওঁর গান শুনতে শুনতেই মারা যাব
    আনন্দবাজার | ১৬ মার্চ ২০২৫
  • আজ কবীর সুমনের জন্মদিন। এই দিনটা আমার সব সময় মনে থাকে। ৯০-এর দশকে বাংলা গানকে নতুন পথ দেখিয়েছিলেন। বলা ভাল, নতুন ভাবে আবিষ্কার করেছিলেন। ওঁকে সেই সময়ের বাংলা গানের পথপ্রদর্শক বললেও ভুল বলা হবে না।

    আমাদের স্মৃতি তো দুর্বল। আমরা ভুলে যাই। আমরা বুঝে উঠতে পারি না, কোন পথটা আমাদের বেছে নেওয়া উচিত। কবীর সুমনই কিন্তু তখন আমাদের আলো দেখিয়েছিলেন। সেই আলো অনুসরণ করেই গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা সঙ্গীতকর্মীরা (সঙ্গীতশিল্পী বলব না) হেঁটে চলেছি। তিনি তো আমার পথপ্রদর্শক বটেই। কবীর সুমন আমার জীবনের আলো। ওঁর গান, ওঁর ভাবনাচিন্তা, মঞ্চে ওঁর উপস্থিতি, মঞ্চে গানের মাঝে ওঁর কথা বলা— আমার কাছে আলোর মতো। ওঁর অনুষ্ঠান যত দেখেছি, কমতে থেকেছে অন্য শিল্পীদের অনুষ্ঠান দেখার অভ্যাস। কলকাতার মধ্যে ওঁর অনুষ্ঠান থাকলেই আমি দর্শকাসনে উপস্থিত থাকতাম। সব সময় চেষ্টা করতাম, টিকিট সংগ্রহ করার ও দেখার।

    অনুষ্ঠানে গিয়ে ওঁর গান শুনেছি। মোহিত হয়ে ওঁর কথা শুনেছি। ওই মুহূর্তগুলোই কিন্তু আমাকে তৈরি করেছে। আমি এখন যা, তার অনেকাংশই সেই মুহূর্তগুলোর জন্যই। এখন গান লেখা, বা গান নিয়ে যা যা কাজ করি, তার উপর কবীর সুমনের প্রভাব ভীষণ ভাবে রয়েছে। একটি ছবিতে ওঁর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ছবির নাম ছিল ‘জাতিস্মর’। ছবির দু’টি গান আমাকে গাইতে দিয়েছিলেন। একটি গান পুরস্কারও পেয়েছিল। আমার গানের তালিকায় এই গান দু’টি অন্যতম, আজীবন তা-ই থাকবে।

    তবে, ব্যক্তি কবীর সুমনকে নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। তিনি মানুষ হিসেবে কেমন, ছোটবেলায় তিনি কেমন ছিলেন, ওঁর বাবা-মা ওঁকে মারতেন কি না, ওঁর জীবনে কত বার প্রেম এসেছে, কী দিয়ে ভাত মেখে খান— এর কোনওটা নিয়েই আমি ভাবিত নই। আমি কেবলই ওঁর কাজ নিয়ে আগ্রহী। তার কারণ, তিনি যে কাজটা করেছেন সেটা আর কেউ করতে পারবেন না।

    আজ জন্মদিনে কবীর সুমন অনুষ্ঠান করছেন আমি জানি। আমার তরফ থেকে ওঁকে অনেক শুভেচ্ছা। এখন বাংলা খেয়াল নিয়ে কাজ করছেন কবীর সুমন। আমার মতো সামান্য এক অনুরাগীর তরফ থেকে ওঁর কাছে একটা ছোট্ট দাবি রয়েছে। বাংলা খেয়াল নিয়ে তিনি যেমন কাজ করছেন, তেমনই যেন আধুনিক গান নিয়েও আরও কাজ করেন। তাতে আমরা আর একটু সমৃদ্ধ হতে পারব। বাংলা আধুনিক গানের সময়টা এখন বিশেষ ভাল নয়। একটা সময় বাংলা আধুনিক গান পিছিয়ে পড়ছিল। তখন তিনিই এসে পথ দেখিয়েছিলেন। এখন আবার বাংলা আধুনিক গানের জায়গাটা নড়বড়ে হয়েছে। ওঁর গান শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। ওঁর গান শুনতে শুনতেই মারা যাব। তাই চাইব, বাংলা আধুনিক গান নিয়ে তিনি যেন আরও কিছু কাজ করেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)