এই সময়: তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের চার হাজার নেতা-জনপ্রতিনিধির সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন— ২৪ ঘণ্টাও হয়নি। তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশমতো কাজ শুরু হয়ে গেল তার মধ্যেই। ভোটার তালিকা খুঁটিয়ে দেখার জন্য পাঁচ দিনের মধ্যে তৃণমূলের সমস্ত সাংগঠনিক জেলায় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিষেক। সূত্রের খবর, রবিবার অনেকগুলি জেলা থেকেই এই কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। অভিষেক পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলেও তার অনেক আগেই অধিকাংশ জেলা থেকে কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে যাবে বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ।
অভিষেককে ‘আমাদের সবার নেতা’ বলে শনিবারের ভার্চুয়াল বৈঠকের শুরুতেই মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। এ দিন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের ভূয়সী প্রশংসা শোনা গিয়েছে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। রবিবার তিনি বলেন, ‘ভার্চুয়াল বৈঠকে দু’ঘণ্টা ধরে অসাধারণ বক্তৃতা দিয়েছে অভিষেক। খুব ভালো কর্মসূচি দিয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই, ও যোগ্য ছেলে। কাজের ছেলে। আগে অনেকগুলি আন্দোলন করেছে। সংগঠকদের মধ্যে অভিষেক শ্রেষ্ঠ। দল অভিষেকের মধ্যে অবশ্যই কিছু পেয়েছে। তাই তাঁকে সামনে এনেছে।’
উত্তর ২৪ পরগনার একটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতির কথায়, ‘দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এই নির্দেশ দেওয়ার পরেই রবিবার আমরা কোর কমিটির বৈঠক করেছি। জেলা স্তরের কমিটির সদস্যদের নাম নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ জেলা স্তরের এই কমিটিতে কারা থাকছেন? মুর্শিদাবাদের এক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কথায়, ‘এই কমিটিতে জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যান, পঞ্চায়েতের সভাপতি, পুরসভার চেয়ারম্যান, বিধায়ক ও সাংসদরা থাকছেন। জেলা স্তরের কমিটির সদস্য হিসেবে এঁদের নামের তালিকাই নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ একই সঙ্গে ব্লক ইলেক্টোরাল রোল সুপারভাইজ়ার এবং টাউন ইলেক্টোরাল রোল সুপারভাইজ়ারের কাজ জেলার কোন নেতা করবেন, তা নিয়েও সাংগঠনিক জেলা থেকে খসড়া নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সূত্রের খবর, অধিকাংশ জেলা একাধিক নাম পাঠিয়েছে। এই নামের তালিকা থেকে নেতৃত্ব উপযুক্ত নেতাকে বেছে নেবেন বলে তৃণমূলের জেলার নেতারা মনে করছেন।
পাশাপাশি ব্লক ও অঞ্চল–টাউন স্তরের কমিটি গঠন নিয়েও সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। অভিষেকের ভার্চুয়াল বৈঠকের পরে জেলা থেকে অঞ্চল স্তরের নেতারা ভোট–মোডে চলে গিয়েছেন বলে তৃণমূলের একাধিক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পর্যবেক্ষণ। দক্ষিণবঙ্গের তৃণমূলের এক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কথায়, ‘ভোটার লিস্ট স্ক্রুটিনির কাজ একেবারে সময়সীমা বেঁধে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ভোটে কোন বিধানসভার কোন বুথে জোড়াফুলের ফল ভালো হয়নি, তা একেবারে নির্দিষ্ট করে অভিষেক উল্লেখ করেছেন। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দপ্তর বুথ স্তর পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফল খুঁটিয়ে দেখে খামতি, দুর্বলতা চিহ্নিত করেছে। ফলে সবাই বুঝতে পারছেন, যেখানে গ্যাপ রয়েছে, দ্রুত তা মেক–আপ করতে হবে।’
অভিষেক ও সুব্রত বক্সীর উপস্থিতিতে শনিবারের ভার্চুয়াল বৈঠক শেষ হওয়ার পরেই তৃণমূল কর্মী–সমর্থক প্রভাবিত সামাজিক মাধ্যমগুলিতে এই বৈঠকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রচারও শুরু হয়েছে। তৃণমূলের সাইবার সৈনিকদের বড় সংগঠন হলো ‘ফ্যাম’। এক্স হ্যান্ডলে ‘ফ্যাম’ অভিষেকের ভার্চুয়াল বৈঠকের বিভিন্ন নির্দেশ গ্র্যাফিক্স করে পোস্ট করেছে। সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূলের কর্মী–সমর্থকদের সর্ববৃহৎ এই গ্রুপ শনিবারই তাদের এক্স হ্যান্ডলের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) পাল্টে দিয়েছে। নতুন ডিপিতে লেখা রয়েছে, ‘আগামীকে মানতে হলো’। এই ভার্চুয়াল বৈঠকে সুব্রত বক্সী দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে ‘আমাদের সবার নেতা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। সুব্রত বক্সীর সেই মন্তব্যকে ‘ফ্যাম’ গ্র্যাফিক্স আকারে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছে। তৃণমূলের যুব নেতা ঋজু দত্ত এ দিন সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘অভিষেক আমাদের দলের সেনাপতি। সুব্রত বক্সী পরিষ্কার বলেছেন, উনি সবার নেতা, উনি আমাদের নেতা। ২০২৬ সালের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেকের সেনাপতিত্বে তৃণমূল লড়াই করতে প্রস্তুত।’