একা রামে রক্ষা নেই, দোসর লক্ষ্মণ! মার্চ পড়তেই তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি মুম্বইয়ে। মধ্য মার্চে ৪০ ডিগ্রিতে পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ওডিশা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে ৪২ ডিগ্রিতে। উত্তর ভারতে সমভূমি, মধ্যভারতের মালভূমি, মধ্য–পূর্বের ছোটনাগপুর উপত্যকা এবং দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জলের হাহাকার শুরু হলো বলে। এমনই পরিস্থিতিতে দোলের দিন শুধুমাত্র রং গুলতে ২৭০ কোটি লিটার পানীয় জল খরচ হলো ভারতে।
২৭০ কোটি লিটার...পরিমাণটা ঠিক কত সেটা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কল্পনা করা কঠিন। বোঝার সুবিধার জন্য বলা যায় কলকাতা শহরে পান, স্নান এবং অন্য রোজকার খরচের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৩৫ কোটি লিটার জলের প্রয়োজন হয়। সোজা হিসেব, দোল এবং হোলিতে শুধু রং গুলতে যে পরিমাণ জল খরচ হয়েছে দেশে সেটা কলকাতার দু’দিনের খোরাক।
অবৈজ্ঞানিক এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে নগরায়ন চলছে গোটা দেশেই। এর ফলে প্রতিদিন যে পরিমাণ পানীয় জল মাটির নীচ থেকে পাম্প করে তুলে নেন ভারতীয়রা তার পরিমাণ কল্পনাতেও আসে না। কিন্তু যতটা জল মাটি থেকে তোলা হয়, তার পুরোটাই কি কাজে লাগে? ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজির গবেষকরা জানাচ্ছেন, এ দেশে প্রতিদিন মাটির নীচ থেকে যে পরিমাণ জল পাম্প করে তুলে নেওয়া হয়, তার ৩০ শতাংশই নষ্ট হয়। জল বিশেষজ্ঞ বা হাইড্রোলজিস্টদের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতিদিন অপচয় হওয়া জলের পরিমাণ ৪৯০০০ মিলিয়ন লিটার।
এই বিরাট সংখ্যার তাৎপর্য উপলব্ধি করা প্রায় অসম্ভব বলে হাইড্রোলজিস্টরা এ ক্ষেত্রেও কিছু ‘সহজবোধ্য’ তুলনার আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, অলিম্পিকসে যে ধরনের সুইমিং পুলে সাঁতারের প্রতিযোগিতা হয়, সেই পুলে ২.৫ মিলিয়ন লিটার জল ধরে। সেই হিসেবে ভারতে যে কোনও সাধারণ একটা দিনে যে পরিমাণ জল নষ্ট হয় তা দিয়ে ১৯ হাজার ৬০০টি অলিম্পিকস স্ট্যান্ডার্ড সুইমিং পুল ভর্তি করা যায়। কলকাতার প্রাত্যহিক জল খরচের উদাহরণ দিলে বলতে হয়, দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ জল নষ্ট হয় তা দিয়ে কলকাতার ৩৬ দিনের জলের খরচ মিটে যায়।
জলবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘দেশের বেশির ভাগ এলাকাতেই পান ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানুষের ভরসা মাটির নীচে জমে থাকা জল। কিন্তু মাটির নীচে জল আসে কী ভাবে?’ বিজ্ঞানীদের কথায়, ‘এই জলের প্রধান উৎসই হলো বৃষ্টির জল। সারা বছর ধরে দেশে যে বৃষ্টি হয়, সেই জলই ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে নীচে চলে গিয়ে জমা হয়। বোরিং পাইপের মাধ্যমে ওই জলকেই পাম্প করে উপরে নিয়ে এসে ব্যবহার করা হয়।’ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই দেশের বৃষ্টির প্যাটার্ন বদলে যেতে শুরু করেছে। কখনও অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়। আবার কখনও দীর্ঘ দিন বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না। এর ফলে মাটির নীচে সঞ্চিত জলের জোগান খুব নিয়মিত নয়। কিন্তু, চাহিদায় কোনও হেরফের হয় না। তাই প্রতিদিনই ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে দোল বা হোলির মতো উৎসব এলে দৈনন্দিন জল খরচের পরিমাণ যে অনেকটাই বেড়ে যায় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই উৎসবে হাইড্রোলজিস্টরা যে জল খরচের কথা বলেছেন সেটা শুধু রং গোলার জন্য। এর পর রং তুলতে যে কত কোটি লিটার জল খরচ হয় তার হিসেব করে উঠতে পারেননি ওঁরা। তবে জানাচ্ছেন, যে রকমের কড়া রাসায়নিক রং ব্যবহারের চল ক্রমশ বাড়ছে, তাতে সেই রং তুলতে জলের খরচও বাড়ছে। তাই যে কোনও সচেতন নাগরিকেরই উচিত দোলে জল খরচের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য।