• স্কুলছুটদের নতুন পথের দিশা কুমারপুর আশ্রম
    এই সময় | ১৭ মার্চ ২০২৫
  • অর্ঘ্য ঘোষ, ময়ূরেশ্বর

    কারও বাবা-মা দিনমজুর, কারও বাবা ভ্যানচালক। অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। বেশিরভাগের বাড়িতেই পড়াশোনায় সাহায্য করার কেউ নেই। বাবা-মা কাজে বেরিয়ে গেলে ছেলেমেয়েরা স্কুলে গেল কি না, খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। স্কুলছুট হয়ে শিশুশ্রমিকের দলে নাম লেখানোই যেন ছিল তাদের অনিবার্য ভবিষ্যৎ। সেই প্রবণতা রুখে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ‘কুমারপুর আদিবাসী আশ্রম’ ছাত্রাবাস। অন্ধকার থেকে আলোর পথে হাঁটতে শিখিয়েছে এই ‘আশ্রম’।

    প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের অর্থানুকূল্যে ১৯৮৮ সালে এটি চালু হয়। ৩০ আসন বিশিষ্ট এই আশ্রমে মাথাপিছু বরাদ্দ মাসিক ১৮০০ টাকা। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত আদিবাসী সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া-পড়াশোনার সুযোগ পায়। ওই সুযোগটুকুই বহু আদিবাসী ছাত্রকে ভবিষ্যতের পথ দেখিয়েছে। এখান থেকেই পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করছেন ময়ূরেশ্বরের নন্দীহাটের অনিল টুডু। সাঁইথিয়ার বেহুলা পাড়ার মহাদেব সর্দার, মিঠুন মুদি আজ পুলিশকর্মী।

    তাঁরা বলেন, ‘অর্থাভাবে আমাদের দাদা-দিদিদের পড়াশোনা হয়নি। হস্টেলে পড়াশোনার সুযোগ না-পেলে আমাদেরও পড়াশোনা হতো না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছিলাম বলে ছেলেমেয়েদের ভালো ভাবে পড়াতে পেরেছি।’ অন্য দিকে, রামপুরহাটের গড়িয়ার ভবেন কিস্কু, মল্লারপুরের সনাতন হেমব্রমদের কথায়, ‘ওখানে থেকেই পড়ার ইচ্ছে জন্মায়। ছাত্রাবাস থেকে পাশ করে ছেলেরা এখন কলেজে পড়ছে। বাড়িতে থাকলে হয়তো পাথর খাদানে কাজ করতে হতো।’

    প্রথম থেকেই অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রদের সন্তানস্নেহে লালন-পালন করছেন ছাত্রাবাসের সুপার প্রশান্ত আদিত্য এবং তাঁর স্ত্রী শিবানী। পড়ুয়ারা স্থানীয় কুমারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এই স্কুলে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক ছিলেন স্বপন বাগদি। তাঁরা জানান, ‘ছাত্রাবাসের কয়েকশো ছেলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। অনেকে সরকারি চাকরির পাশাপাশি নানা ভাবে প্রতিষ্ঠিত। ওদের প্রতিষ্ঠিত হতে দেখে আমাদের গর্ব হয়।’

  • Link to this news (এই সময়)