• মিড-ডে মিলের নতুন নিদান, প্রশ্নবিদ্ধ কেন্দ্র
    আনন্দবাজার | ১৭ মার্চ ২০২৫
  • কেন্দ্রীয় সরকার নিদান হাঁকছে, ছোটরা ‘তেল কম খাও, ওজন কমাও’! রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্কুলে ছোটদের মিডডে মিল রান্নার স্বাস্থ্যকর প্রকরণ নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর। তাতে বলা হচ্ছে, ছোটদের ভারিক্কি ওজনে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত উৎকণ্ঠায়। কিন্তু ছোটদের পরম ভরসার এই খাবারে বরাদ্দ বাড়ানোর নামগন্ধ নেই। ফলে ছোটদের পুষ্টি সঙ্কটের সুরাহা দেখা যাচ্ছে না।

    মিড-ডে মিল সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের নয়া পরামর্শ নিয়েই রাজ্যের শিক্ষককুল এবং শিক্ষক সংগঠনের একাংশ প্রশ্ন তুলছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিটি বলছে, মিড-ডে মিল রান্নার সময়ে ভোজ্য তেলের ব্যবহার দশ শতাংশ কমাতে হবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২৫’ এবং ‘মন কি বাত অনুষ্ঠানে’ও প্রধানমন্ত্রী স্কুল পড়ুয়াদের ওজন বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন। একটি সমীক্ষার পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালে ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে এক কোটি ২৯ লক্ষ পড়ুয়ার ওজন বেশি। সেখানে ১৯৯০ সালে মাত্র ন’লক্ষ স্কুল পড়ুয়ার ওজন বেশি ছিল। স্কুল পড়ুয়াদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনচর্যার কারণেই ওজন বাড়ছে বলে ওই সমীক্ষায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে। তবে প্রধানত শহরের পড়ুয়াদের মধ্যেই এই বাড়তি ওজনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

    স্কুল পড়ুয়াদের মোটা হওয়ার ধাত শুধরোতেই বিজ্ঞপ্তিটি স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা বলছে। বলা হচ্ছে, স্কুল স্তর থেকেই শারীর চর্চায় নজর দিতে হবে। এর জন্য স্কুলে নানা ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতেও বলা হয়েছে। কেন্দ্রের পরামর্শ, আমাদের দেশে যে-হেতু অনেক পড়ুয়াই মিড-ডে মিলের উপরে নির্ভর করে তাই মিড-ডে মিলের রান্নাও করতে হবে স্বাস্থ্যকর ভাবে। দশ শতাংশ তেল কমিয়ে দরকারে সেদ্ধ বা সেঁকা রান্নার (গ্রিল) উপরেও জোর দিতে বলে কেন্দ্র।

    এই বিজ্ঞপ্তি কতটা বাস্তবসম্মত সেই প্রশ্নে এ রাজ্যের শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলি এখন সরব। স্কুল শিক্ষকদের একাংশের মতে, আপাতত যতটুকু বরাদ্দে মিড-ডে মিলের রান্না হচ্ছে, তাতে তো নুন আনতে তেল ফুরনোর দশা। এই পরিস্থিতিতে বেশি তেলে মিড-ডে মিল রান্না কার্যত অসম্ভব। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডার ব্যাখ্যা, ‘‘প্রাথমিকে মিড-ডে মিলে মাথাপিছু বরাদ্দ ৬ টাকা ১৯পয়সা। উচ্চ প্রাথমিকের মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৯ টাকা ২৯ পয়সা। সপ্তাহে এক দিন ডিম, এক দিন সয়াবিন, কোনও দিন ডাল, খিচুড়ি, তরকারি দেওয়ার কথা। কিন্তু এটুকু বরাদ্দে পুষ্টিটাই ঠিক মতো হয় না।’’ মিড-ডে মিলের রান্নায় এমনিতেই ছিটেফোঁটা ভোজ্য তেল পড়ে জানিয়ে আনন্দের প্রশ্ন, ‘‘রান্নায় ১০% কম তেল খরচের নিদান মানে কি এ বার তেলবিহীন রান্নার কথা বলা হচ্ছে?’’

    ওই শিক্ষক সংগঠনের কর্তার মতে, ‘‘মূলত অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েরা সরকারি স্কুলে পড়ে। তারা অনেকেই অপুষ্টিতে ভোগে। বেশি তেল, মশলার খাবার ওদের জোটে না বললেই চলে। এই বিজ্ঞপ্তি আদৌ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া লক্ষ লক্ষ পড়ুয়াদের কথা ভেবে লেখা হয়নি। বরং দেশের বেশির ভাগ স্কুল ছাত্রছাত্রীর বিষয়ে কেন্দ্রের অজ্ঞতাই বিজ্ঞপ্তিটিতে প্রকট।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফেও একই সুরে বলা হচ্ছে, মিড-ডে মিলের বরাদ্দের যা হাল, তাতে পড়ুয়াদের খাবারে পুষ্টির অভাবটাই প্রধান সমস্যা। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘ওই বিজ্ঞপ্তির নির্দেশিকা মেনে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের জন্য আগে উপযুক্ত বরাদ্দের দরকার। পড়ুয়াদের পুষ্টির দিকটারই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)