• কমিটি ভাঙা-গড়ার ভার জেলাকেই দিচ্ছে সিপিএম
    আনন্দবাজার | ১৭ মার্চ ২০২৫
  • সংগঠনে ৯ বছর আগে উঠে যাওয়া ব্যবস্থা আবার ফিরে আসতে পারে সিপিএমে। জেলা কমিটির নীচে কী ধরনের কমিটি থাকবে, সেই পুনর্বিন্যাসের দায়িত্ব এ বার জেলার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

    সরকারে আসার পরে রাজ্যে দল বড় হতে শুরু করায় ১৯৮৫ সালে সিপিএমে চালু হয়েছিল জ়োনাল কমিটির ব্যবস্থা। শাখার উপরে এবং জেলার নীচে তখন থেকে লোকাল ও জ়োনাল, এই দ্বিস্তরীয় কমিটি ছিল। ক্ষমতা হারানোর পরে লোকবল কমে দল ছোট হতে শুরু করার পরে ২০১৬ সালে কলকাতায় রাজ্য সিপিএমের সাংগঠনিক প্লেনামে লোকাল ও জ়োনাল কমিটি তুলে দিয়ে শুধু এরিয়া কমিটি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এরিয়া কমিটি নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা গত দু’বছর ধরে তুলেছেন বিভিন্ন জেলার নেতৃত্ব। সিপিএমের সদ্য হয়ে যাওয়া রাজ্য সম্মেলনেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। সূত্রের খবর, কমিটি পুনর্বিন্যাস করে জ়োনাল ফিরিয়ে আনা হবে কি না, তার পরিধি কী হবে, ঠিক করার ভার জেলার উপরেই ছেড়ে দিতে চেয়ে ‘নোট’ দিয়েছে রাজ্য সিপিএম। অর্থাৎ কমিটির ক্ষেত্রে এর পরে রাজ্য জুড়ে আপাতত কেন্দ্রীয় কোনও ব্যবস্থা না-ও থাকতে পারে।

    সিপিএম সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান পূর্ব, মুর্শিদাবাদের মতো কয়েকটি বড় জেলা জ়োনাল ব্যবস্থায় দ্রুত ফেরত যেতে চায়। কিছু জেলা আরও একটু অপেক্ষা করার পক্ষপাতী। নীতিগত ভাবে বর্তমান ব্যবস্থা বদলের বিপক্ষে রয়েছে কলকাতা জেলা। তাদের যুক্তি, সাংগঠনিক স্তরে এখন এত লোক নেই, যা দিয়ে লোকাল ও জ়োনাল কমিটির দু’টি স্তর সামলানো যায়।

    লোকাল ও জ়োনাল কমিটি উঠিয়ে দেওয়ার সময়ে সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মত ছিল, শাখা ও জেলার মাঝে একটিই কমিটি থাকলে নেতারা আরও বেশি করে নিচু তলায় গিয়ে সংগঠনের কাজ করতে পারবেন। কিন্তু মহম্মদ সেলিম রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে ২০২৩ সালে হাওড়ায় দলের রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে একাধিক জেলার নেতারা এরিয়া কমিটিকে ঘিরে নানা বিভ্রান্তির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। পরবর্তী সময়েও জেলার নেতারা দলে জানিয়েছেন, এরিয়া কমিটির পরিধির জন্য কর্মসূচির ক্ষেত্রে গণ-সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়েও সমস্যা হচ্ছে। তার সঙ্গেই অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, শুধু এরিয়া কমিটি থাকায় অনেকেই কমিটির বাইরে। তাঁদের আর কাজে ‘দায়বদ্ধ’ রাখা যাচ্ছে না। লোকাল ও জ়োনাল থাকলে আরও বেশি লোককে কমিটির সঙ্গে রাখা সম্ভব।

    এই বিতর্কের মধ্যেই সিপিএমের অন্দরে একাংশের প্রস্তাব, এরিয়া কমিটির অঞ্চল আরও ছোট করে দেওয়া হোক। তার উপরে বিধানসভা ধরে কমিটি রাখা হোক। তবে এই প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর এখনও পড়েনি। কমিউনিস্ট পার্টি কেন ভোট-মুখী সংগঠন করবে, পাল্টা এই তাত্ত্বিক প্রশ্নও দলে আছে! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সম্মেলনের সময়ে এরিয়া কমিটি এমন ভাবেই করা হয়েছে, যে জেলা যেটায় সুবিধা মনে করবে, সেই ভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)