বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
মাইথনে ফ্লোটিং হোটেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিল ডিভিসি। উইক এন্ডে পর্যটকদের ভ্রমণের তালিকায় উপরের দিকে থাকা মাইথনে ভাসমান হোটেল তৈরি হলে জলাধারের আকর্ষণ তুঙ্গে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলা–ঝাড়খণ্ড সীমানায় পান্না রঙের এই জলাধার তৈরি হয়েছিল ১৯৫৭ সালে। আপাতত এখানে রয়েছে ডিভিসি পরিচালিত অতিথিশালা ‘মজুমদার নিবাস’। এ ছাড়া আশপাশে রয়েছে আরও কয়েকটি হোটেল, রিসর্ট। কিন্তু, সিজ়নে প্রাক বুকিং ছাড়া কোনও হোটেলেই ঠাঁই মেলে না পর্যটকদের।
সেখানে এ বার একেবারে বিলাসবহুল ভাসমান হোটেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি। এই হোটেল ও রেস্তোরাঁ তৈরির জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার করা হয়েছে বলে ‘এই সময়’কে জানিয়েছেন ডিভিসির জনসংযোগ আধিকারিক অরবিন্দ কুমার সিং। আগামী দু’তিন মাসের মধ্যে টেন্ডার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
দরপত্রে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ পিপিপি মডেলে নির্মিত হবে এই ভাসমান হোটেল। হোটেলের নকশা, খরচ, পরিচালনায় ইচ্ছুক ফার্ম, প্রাইভেট লিমিটেড, জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির কাছ থেকে এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট চাওয়া হয়েছে। ডিভিসি জানিয়েছে, জলের উপরে তৈরি এই হোটেল হবে পরিবেশবান্ধব। যে সব সামগ্রী দিয়ে ভাসমান রিসর্ট তৈরি হবে তা যেন কোনও ভাবে প্রকৃতির ক্ষতি না করে। রেস্তোরাঁর সঙ্গে এই হোটেলে থাকছে ১০টি আধুনিক সুবিধাযুক্ত ঘর। ড্যামের মাঝে ভাসমান বিলাসবহুল হোটেল থেকে সামনের নীল পাহাড়, পান্না রঙের জলে সূর্যাস্তের রূপ রোমাঞ্চকর অনুভূতির জন্ম দেবে বলেই মনে করছে ডিভিসি।
জানা গিয়েছে, কাজের সুযোগ পাওয়া সংস্থাকে প্রথমে ৩০ বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে। ফ্লোটিং হোটেলের জন্য মজুমদার নিবাসের আশপাশের জায়গার কথাই ভাবা হয়েছে। জনসংযোগ আধিকারিক অরবিন্দ কুমার সিং বলেন, ‘ডিভিসির বর্তমান চেয়ারম্যান এস সুরেশ কুমার এই বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহ দেখিয়েছেন। একাধিকবার তিনি মাইথন এসেছেন। কী করে মাইথনকে দেশের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরা যায় তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন। মাইথনে জলের মধ্যে ভাসমান রেস্তোরাঁ ও বিলাসবহুল রিসর্টের ভাবনা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত।’
ডিভিসির এক আধিকারিক জানান, প্রতি বছর দুর্গাপুজোর পর থেকেই মাইথনে পর্যটকদের ভিড় জমতে শুরু করে। সেই ভিড় চলে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। মাইথনের বিভিন্ন দ্বীপে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ভুটভুটির মালিক মহম্মদ কামরান বলেন, ‘এমন হোটেল তৈরি হলে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বাড়বে। এলাকার অর্থনীতিরও উন্নতি ঘটবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, গুলজার খানের কথায়, ‘মজুমদার নিবাস জলাধারের ভিতরে। কিন্তু অনেকেই ওই হোটেলে জায়গা পান না। তাঁরা একটু খরচ করে ওই হোটেলে থাকতে পারবেন।’ মাইথনের দীর্ঘদিনের সমাজকর্মী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘মাইথন, পাঞ্চেত, তিলাইয়া, কোনারের মতো ড্যামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিসীম। পর্যটনের স্বার্থে নানা ভাবে ভাবতে হবে ডিভিসিকে। মাইথনে রোপওয়ে তৈরির উদ্যোগ যদি ডিভিসি নেয়, তা হলে সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভিড় থাকবে।’ আসানসোলের মেয়র এবং বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় বলছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে রোপওয়ে করার প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’