• ৬০০ টাকা আর স্বপ্নই সম্বল, ফিল্ম বানাচ্ছেন এমএ-র ছাত্র
    এই সময় | ১৭ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: হাতে মাত্র ৬০০ টাকা। যা দিয়ে কলকাতা শহরে দিন দুয়েকের বেশি চলার কথা নয়। কিন্তু এই সামান্য অর্থ সম্বল করেই আস্ত একটি ছবি বানাতে নেমে পড়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ়ের এক পড়ুয়া। এই টাকাটুকুও তিনি জোগাড় করেছেন এসি মেকানিকের হেল্পার হিসেবে কাজ করে। ভবিষ্যতে এ কাজ করেই ফিল্ম বানানোর জন্য টাকা জমাতে চান। সব ঠিক থাকলে যাদবপুরের পড়ুয়া সুরজিৎ মিস্ত্রির শুটিং শুরু হবে আগামী মঙ্গলবার। শুটিং হবে মূলত দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন, প্রমোদনগর এই সব জায়গায়। প্রবল আর্থিক সঙ্কটে থাকা মিস্ত্রি পরিবারের এই ছেলের স্বপ্ন, একদিন দেশের সেরা পরিচালক হওয়ার।

    পূর্ব সিঁথির বাসিন্দা সুরজিতের বাবা ছিলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার পূর্ত বিভাগের কর্মী। ২০১৬ সালে তিনি মারা যান। তারপর থেকে সুরজিতের মা পুরসভারই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। মাসে ন’হাজার টাকা বেতন আর কয়েকটি বাড়িতে রান্না করে সংসার চালান তিনি। ছেলেও মাঝেমধ্যে কলেজ স্ট্রিটে একটি বইয়ের দোকানে কাজ করতেন। আর মনে ছিল ফিল্ম বানানোর নেশা।

    তিন–চার বছর কাজ করার পরে সিদ্ধান্ত নিলেন, আর নয়। এ বার নেশাকেই পেশায় পরিণত করতে হবে। সে জন্য জানতে হবে ফিল্মের ইতিহাস। গুরুদাস কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পরে সেই তাগিদেই যাদবপুরে ফিল্ম স্টাডিজ়ে ভর্তি হওয়া। এখন স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্র সুরজিৎ। ফিল্ম বানানোর জন্য টুকটাক কাজ করেন। এই যেমন এসি মেকানিকের হেল্পারের কাজ করে ৬০০ টাকা জমিয়েছেন।

    তাঁর প্রথম ফিল্মের নাম দিয়েছেন ‘দোঁহা’। কবীরের দোঁহা থেকেই এই নামকরণ। গল্প ঘুরপাক খাচ্ছে একটি ছেলেকে কেন্দ্র করে। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে নিজস্ব ভাবনা, জীবন দর্শন অনুসরণ করতে গিয়ে তাঁকে কী ভাবে নানা সমস্যায় পড়তে হয়, কী ভাবে তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, সে সব নিয়েই গল্প। ২০ মিনিটের এই ছবিতে ১২টি চরিত্র। চরিত্রগুলিতে অভিনেতা–অভিনেত্রীদের ছাড়াও আছেন ক্যামেরা, এডিটিং, সাউন্ডের লোকজন। এ জন্য দরকার কয়েক লক্ষ টাকা। কিন্তু সম্বল যে ৬০০ টাকা। সুরজিতের আশা, তাঁর কথা জেনে কেউ যদি সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন, তা হলে বড় ভালো হয়।

    কিন্তু কেন তিনি প্রোডিউসার খুঁজলেন না? ছাত্রের জবাব, ‘আমি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। দেখলাম, প্রোডিউসাররা শুধু ব্যবসা বোঝেন। সেটা অন্যায়ও নয়। কিন্তু এতে শিল্পের স্বাধীনতা থাকে না। প্রথম ফিল্মটা আমি আমার মতো করেই বানাতে চাই। তাই মানুষের উপরেই ভরসা। যদি টাকা না–ও ওঠে, সমস্যা নেই। আমি আমার মতো করে কাজ করব।’ কী ভাবে? সুজিৎ বলেন, ‘টুকটাক কাজ করব, টাকা জমাব, শুটিং করব।’

  • Link to this news (এই সময়)