প্রশান্ত পাল, পুরুলিয়া
এক বছর আগের ঘটনা। ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের বেশ কিছু জেলার শহরাঞ্চলে বিপর্যয় নিয়ে তিনি মুখ খুলেছিলেন। সেই সময়ে সরাসরি কোনও জেলার নাম না-নিলেও শনিবার ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, পুরুলিয়া এবং ঝালদা, জেলার দুই শহরে ভরাডুবিতে মোটেও খুশি হননি।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য ছিল, ‘পুরুলিয়ার দু’একটি বিধানসভায় আমরা ভালো ফল করতে পারতাম। বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে ফল অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু পুরলিয়া এবং ঝালদা শহরের জন্য হেরেছি। পুরুলিয়া বিধানসভায় রয়েছে ২৭৪টি বুথ, তার মধ্যে ১৬২টি বুথে খুব অল্প ব্যবধানে দলকে হারতে হয়েছে।’
এ ভাবে দুই শহর নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে তিনি মুখ খোলায় পরিস্থিতি হয়েছে জটিল। গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তবে কী নেতৃত্বের ব্যাটন বদল হতে পারে? যদি তা-ই হয়, তা হলে দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে?
গত লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, পুরুলিয়া শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল এগিয়েছিল মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে। ২০টি ওয়ার্ডে দাপট ছিল বিজেপির! অথচ ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে বর্তমানে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ২০টি ওয়ার্ড। আবার পুরুলিয়া বিধানসভায় বিজেপি ২১,৭৭৩ ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূলের চেয়ে। শহরাঞ্চলে সেই ব্যবধান ছিল প্রায় ২৩,০০০! কেন এই বৈপরীত্য?
নিচুতলার কর্মীদের একাংশের দাবি, পুর প্রতিনিধিদের সিংহভাগ স্থানীয় নির্বাচনে নিজেদের আসন টিকিয়ে রাখতে যতটা সক্রিয় থাকেন, সেটা অন্য ভোটের সময়ে দেখা যায় না। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর থেকে এই প্রবণতা প্রকট হয়েছে। অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূল শহর সভাপতি প্রদীপ কুমার ডাগা-র। তিনি বলছেন, ‘এটা সত্যি, লোকসভা ভোটে ফল খুব খারাপ হয়েছে। পুর প্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তারও আংশিক সত্যতা রয়েছে। কিন্তু সবাই যে আন্তরিক ভাবে কাজ করেননি, তেমনও নয়। ধর্মীয় কিছু বিষয়ও প্রভাব ফেলেছে।’
ঝালদা শহরে আবার গত লোকসভা নির্বাচনে ১২টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। মাত্র একটি ওয়ার্ডে লিড পেয়েছিল তৃণমূল। যা নিয়ে ঝালদা শহর তৃণমূলের সভাপতি শ্যাম চন্দ্র বলেছেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শুধু সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, পুর পরিষেবার বিষয়ও প্রভাব ফেলেছে। দলের সঙ্গে পুরসভা পরিচালনায় বিস্তর ফাঁক রয়েছে।’ পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের দাবি, পুর প্রতিনিধিরা নিজেদের ওয়ার্ডে লিড ধরে রাখলে এই ফল হতো না।
তবে জেলার অন্যত্র যে ফল ভালো হয়েছে, তা-ও জানিয়েছেন অভিষেক। বিশেষ করে বান্দোয়ানে, মানবাজারে, কাশীপুরে ও বলরামপুরে। জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘গত লোকসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। সতর্ক থাকতে হবে।’
দুই শহরের নেতৃত্বে রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে জেলা চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহতো বলেন, ‘ফল যে খারাপ হয়েছে এটা তো সকলেই দেখেছেন। সাংগঠনিক কাজকর্মের বিষয়ও নেতৃত্বই দেখবে।’