• নদীর জলে ক্যান্সারের বীজ, সতর্ক করছে আইসিএমআর
    এই সময় | ১৭ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: গাঙ্গেয় অববাহিকায় থাকা লোকজন ক্যান্সারে বেশি ভোগে। এমন কথা ২০১২ সালেই প্রথম জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। এক যুগ পরে সেই আইসিএমআর-ই ফের জানাল, শুধু গঙ্গাই নয়, ভারতের যে কোনও নদী-নালার আশপাশে থাকা লোকজনের মধ্যেই ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি, বিশেষত যদি সেই নদীতে মেশে সংশ্লিষ্ট অববাহিকার বর্জ্য। আর এর কারণ হলো নদীর ওই এলাকার দূষণ, যার নেপথ্যে রয়েছে সিসা, আর্সেনিক, অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুর সহনসীমার অনেক বেশি মাত্রায় উপস্থিতি।

    গত সপ্তাহ বিষয়টি ওঠে সাংসদে। এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে আইসিএমআর-এর এই নিকাশি সংক্রমিত নদীর দূষণ ও তার জেরে ক্যান্সারের দাপাদাপির কথা রাজ্যসভায় জানান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও জাধব।

    তিনি জানান, আইসিএমআর-এর ওই স্টাডিটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ নামের জার্নালে। পাশাপাশি মন্ত্রী জানান, ক্যান্সারের এই প্রবল মাথাচাড়ার মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া।

    যদিও সমালোচকরা বলছেন, সদ্য শেষ হওয়া কুম্ভে ‘প্রয়াগের জল স্নানের অনুপযুক্ত’ বলে রিপোর্ট দিয়েও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি)-এর সেই রিপোর্ট ঢোঁক গিলে প্রত্যাহার করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নদী নিয়ে আইসিএমআর-এর এ হেন রিপোর্ট কেন্দ্রের তরফেই সংসদে পেশ হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ।

    কারণ, সিপিসিবি-কে উদ্ধৃত করেই আইসিএমআর স্টাডিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, দেশের অধিকাংশ সমতলভূমির বড় নদীর নিকাশি সংলগ্ন এলাকায় ক্যান্সারের জন্ম দিতে সক্ষম কার্সিনোজেনিক মৌল ও অজৈব যৌগের পরিমাণ কতটা মাত্রাছাড়া!

    আর নদী-নালার ওই অংশের জলে আর্সেনিক, অ্যালুমিনিয়াম, সিসার মতো এই কার্সিনোজেনিক ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিই যে আশপাশে থাকা লোকজনের মধ্যে বেড়ে চলা ক্যান্সারের কারণ, তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছেন চিকিৎসকরাও।

    ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘নিশ্চিত ভাবেই এই ভারী ধাতুগুলির জন্যই অববাহিকায় বসবাসকারীদের মধ্যে এমন বেলাগাম বেড়ে চলেছে ক্যান্সার। বিশেষত পাকস্থলি, মস্তিষ্ক, কিডনি ও ফুসফুসের ক্যান্সার।’ একই সুর ক্যান্সার শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের গলায়। তাঁর সংযোজন, ‘গাঙ্গেয় অববাহিকায় যে পিত্তথলির ক্যান্সারের রমরমা, সে কথা আগেই বলেছিল আইসিএমআর। এখন আরও ভয়াবহ তথ্য দিল তারা।’

    কী ভাবে এই ভারী ধাতুগুলো সেঁধিয়ে যাচ্ছে মানবশরীরে? এর ব্যাখ্যায় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আশিস উপাধ্যায় বলছেন, ‘নদীতে মেশা রাসায়নিক বর্জ্য দু’ভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রথমত, তা পানীয় জল ও ভূপৃষ্ঠের জল, দুটোকেই কার্সিনোজেনিক উপাদানে পুষ্ট করে। আর দ্বিতীয়ত, আমাদের অজান্তেই সেই জল প্রতি মহূর্তে পান করা এবং অন্যান্য গেরস্থালি ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে ডিএনএ-র অপূরণীয় ক্ষতি করে দেয়। এতে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে যায়, যার জেরে আখেরে জন্ম নিতে পারে ক্যান্সারও।’ তিনি জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ যেমন জরুরি, তেমনই দরকার দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয় ও তার যথাযথ চিকিৎসা।

    কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অবশ্য সংসদে জানিয়েছেন, সে চেষ্টা চলছেই ধারাবাহিক ভাবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে যাতে নদী-নালায় মেশা নিকাশি বর্জ্যের যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ হয় এবং নদীর জলে মেশা রাসায়নিকের মাত্রাকে সহনসীমার মধ্যে রাখা যায়, তা নিশ্চিত করতে অনেকগুলি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে শিল্পজাত বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপরেও। যদিও তার ইতিবাচক প্রভাব কবে ও কত দূর পড়বে জনস্বাস্থ্যে, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা।

  • Link to this news (এই সময়)