প্রদীপ চক্রবর্তী, সিঙ্গুর
চিঠি লেখা ভুলে গিয়েছে নতুন প্রজন্ম। চিঠিতে নিজস্ব অভাব–অভিযোগ জানানোর পুরোনো রীতিও উধাও। এতে নবীন প্রজন্ম বিশেষ ভাবে প্রভাবত না হলেও প্রাচীনরা একটু অসহায় বোধ করেন বৈকি! এখনও কিছু জানাতে গেলে তাঁরা স্মার্ট ফোন নয়, চশমা নিয়ে নীল ইনল্যান্ড বা পোস্ট কার্ডের খোঁজ করেন হয়তো!
ল্যান্ড ফোন ছাপিয়ে মোবাইল ফোন ও হোয়াইটস অ্যাপ চ্যাটের দাপটে ব্যাক্তিগত ও সরকারি কাজের পরিসরে কমেছে চিঠি লেখার অভ্যেস। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড় থেকে, অফিস পাড়া থেকে উধাও হয়েছে ডাকঘরের চিঠি ফেলার লাল ডাকবাক্স। পুরোনো অভ্যেস ফিরিয়ে চিঠি তথা অভিযোগ ও পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি গ্রামীণ এলাকার মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে পদক্ষেপ করল হুগলি গ্রামীণ পুলিশ। পুরোনো প্রথায় অভ্যস্ত মানুষদের কথা ভেবেই।
রবিবার সিঙ্গুর থানার পুলিশের তরফে বিলরামবাটি হাটতলা, আনন্দনগর বাজার, নসিবপুর মোড় ও হরিপুর মোড়ে লাল ডাকবাক্সের আদলে চারটি অভিযোগ বাক্স রাখা হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ তাঁদের অভিযোগ, পরামর্শ সরাসরি পোলবা থানার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
সিঙ্গুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লালরঙা ডাক বাক্স বসানো হয়েছে। যেখানে সিসি ক্যামেরা নেই, এমন জায়গাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে, যাতে যাঁরা অভিযোগপত্র জমা করবেন, তাঁদের পরিচয় গোপন থাকে।
হুগলি গ্রামীণ পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণের কাছে সামাজিকমাধ্যমে আবেদন করা হয়েছে, ‘আপনার এলাকায় দীর্ঘ আইন–শৃঙ্খলাজনিত কোনও ঘটনা বা বেআইনি কার্যকলাপ, অথবা কোনও ঘটনা, যেটি প্রশাসনকে জানানো প্রয়োজন বলে আপনারা মনে করেন, সেগুলি একটি সাদা কাগজে লিখে, এই ড্রপবক্সের মধ্যে ফেলে যাবেন। অভিযোগটি প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি চান, আপনার নাম, পরিচয় গোপন রেখেও অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আপনাকে আর সময় ব্যয় করতে হবে না। অভিযোগ জানানোর জন্য আর কোনও ভয়ও পেতে হবে না।’
সিঙ্গুর থানার ওসি সুদীপ্ত সাধুখাঁ বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সমন্বয় জরুরি। সেই যোগাযোগ নিশ্চিত করতে পুলিশ ডাক বাক্সের আদলে অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণের ব্যবস্থা নিয়েছে। সাব ইন্সপেক্টর অরূপ মণ্ডল বিষয়টি তদারকি করছেন।’
হুগলির পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কামনাশিস সেন বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় মানুষের নিরাপত্তা আরও বেশি করে নিশ্চিত করতে গ্রামে গ্রামে পুলিশ জনসংযোগ করেছে। এ বারে আরও এক ধাপ এগিয়ে ডাক বাক্সের আদলে অভিযোগ ও পরামর্শের বাক্স বসানো হয়েছে।এর ফলে অপরাধমূলক কাজ সহজেই দমন করা যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’