• দেড় কোটির মুখোশ বিক্রি, দোলে আরও রঙিন চড়িদা
    এই সময় | ১৭ মার্চ ২০২৫
  • প্রশান্ত পাল, পুরুলিয়া

    দোল শেষ। এ বার বাড়ি ফেরার পালা। জঙ্গলমহলের পলাশ–পার্বণ শেষে পুরুলিয়ার স্মৃতি হিসেবে ছৌ মুখোশ নিয়ে বাড়ির পথ ধরছেন পর্যটকেরা। অতিথিদের পাশাপাশি খুশির ছোঁয়া লেগেছে ছৌ মুখোশ শিল্পীদের মুখেও। পুরুলিয়ার মুখোশের গ্রাম চড়িদায় এ বার দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজোর সময়টা একেবারেই মন্দা গিয়েছে। তবে রঙের উৎসবের সৌজন্যে সেই ক্ষতি অন্তত কিছুটা পুষিয়েছে, জানাচ্ছেন শিল্পীরা।

    মুখোশ শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, গত বুধবার থেকে বিক্রির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চড়িদার ছৌ মুখোশ শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী উৎপল দাস বলেন, ‘পর্যটকেরা যে দামের মুখোশ কিনছেন তাতে বিক্রির পরিমাণ দু’কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

    পুজোর মরশুমে বাজার খারাপ থাকার প্রসঙ্গে পুরুলিয়া ছৌ মুখোশ শিল্পী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক ভীম সূত্রধর বলেন, ‘আরজি করের ঘটনার ছায়ায় পুজোয় এ বার সে ভাবে পর্যটক আসেননি। বড়দিন থেকে নতুন বছর, সে সময়টায় বাজার সামান্য উঠলেও কুম্ভস্নান প্রভাব ফেলেছিল। দোলের বিক্রিবাটায় সেই ক্ষতি বেশ কিছুটা পুষিয়ে গিয়েছে।’

    কী ধরনের মুখোশের চাহিদা বেশি?

    ছৌ মুখোশ শিল্পী ফাল্গুনী সূত্রধরের কথায়, ‘পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত গম্ভীর সিং মুড়ার গ্রাম চড়িদার শিল্পীরা মূলত দুই ধরনের ছৌ মুখোশ তৈরি করেন। যে সমস্ত মুখোশ পরে ছৌ নাচের দল পালা মঞ্চস্থ করে সেই মুখোশ তো রয়েছেই। এর পাশাপাশি রয়েছে ঘর সাজানোর জন্য নানা মাপের মুখোশ। পুজো থেকে দোল পর্যন্ত পর্যটনের মরশুমে ঘর সাজানোর মুখোশের বিক্রিই বেশি থাকে।’ মুখোশ শিল্পী জয়ন্ত সূত্রধর, পরিমল দত্ত, দ্বিজেন সূত্রধররা জানান, জনজাতি নারী-পুরুষের মুখোশের পাশাপাশি দুর্গা, গণেশ, কথাকলি নৃত্যের মুখোশেরও চাহিদা তুঙ্গে।

    ঘর সাজানোর মুখোশের বিক্রি যে প্রতি বছরই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তা অবশ্য মানছেন শিল্পীরা। এ প্রসঙ্গে উৎপল বলেন, ‘জনজাতি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের মুখোশ থেকেই ঘর সাজানোর মুখোশ তৈরির সূত্রপাত। ৭০ দশকের শেষের দিকে এই মুখোশ বানিয়েছিলেন চড়িদার শিল্পী নকুলচন্দ্র দত্ত।’ উৎপল জানান, ২০০৫ সালে চড়িদায় মুখোশের দোকানের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা চার-পাঁচটি। আজ দোকানের সংখ্যা শতাধিক।’

    ভীম সূত্রধরের দাবি, চড়িদা গ্রামে এখন মুখোশ শিল্পীর সংখ্যা কমবেশি ৪৫০। মুখোশ শিল্পী সঙ্ঘের সভানেত্রী রমা সূত্রধর বলেন, ‘চাহিদা বাড়ার কারণে এখন গ্রামের সব বাড়িতে মহিলারাও মুখোশ বানাচ্ছেন, যা কয়েক বছর আগেও ছিল না। গ্রামে কমবেশি শ’দুয়েক মহিলা শিল্পী রয়েছেন।’

    হাওড়া থেকে মুখোশের গ্রাম চড়িদায় এসেছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ছৌ মুখোশ তো শুধু এখানকারই নয়, বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় হস্তশিল্প। প্রিয়জনকে দিতে এর চেয়ে ভাল উপহার কী হতে পারে।’ নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা নিতাই পাল, বগুলার বাসিন্দা সঞ্জিত ঢালি বা বারাসতের বাসিন্দা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘পুরুলিয়ায় পলাশ দেখতে এসে চড়িদার মুখোশ নিয়ে ফিরব না? এগুলিই তো স্মৃতি।’

  • Link to this news (এই সময়)