সম্প্রতি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গিধগ্রামের ৩০০ বছরের পুরনো শিব মন্দিরে প্রবেশ এবং পুজোর অধিকার পেয়েছেন তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষজন। সেই ঘটনা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা রাজ্যে। আর এবার গিধগ্রামের পর নদিয়ার কালীগঞ্জ। সেখানেও একইভাবে তফশিলি জাতিভুক্তদের শিব মন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এই সম্প্রদায়ের মানুষজন। সেই মামলায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
মামলার শুনানিতে বিচারপতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলায় তো এসব ছিল না। এখনও এই ধরনের সমস্যা বাংলায় নেই বলেই বিশ্বাস করি।’ বিচারপতি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এটা কি করে হচ্ছে? পুলিশ কী করছে? কেন তাঁরা উৎসবে যোগ দিতে পারবেন না? কিসের এত ইগো? মানুষ কি তাঁদের অধিকার পাবে না?’ গোটা ঘটনাকে পুলিশের ‘অক্ষমতা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। একইসঙ্গে, এই ঘটনার জন্য ওসির পরিবর্তে কোনও সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিচারপতি।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ঘটনাটি কালীগঞ্জ থানার বৈরামপুরের। মামলাকারীর দাবি, তফশিলি জাতিভুক্ত হওয়ায় তাঁদের শিব মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এনিয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু, জেলা প্রশাসন বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছিল। তারপরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এই সম্প্রদায়ের মানুষদের মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মামলাকারীর দাবি, সামনেই যেহেতু গাজন আসছে। তাই সেই সময় যেন তাঁদের শিব মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। সেই অনুমতি চেয়েই কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা দায়ের হয়। জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় অবস্থিত শিব মন্দিরটি বহু পুরনো। নথিতে উল্লেখ রয়েছে যে মন্দিরটি সাধারণের ব্যবহারের জন্যই। তবে এই এলাকায় রজক বা ধোপা সম্প্রদায়ের মানুষদের গাজনে অংশ নিতে দেওয়া হয় না বলে আদালতে অভিযোগ করেন মামলাকারী। আরও জানান যে গাজনে তাঁরা সন্ন্যাসী হতে চান। শুক্রবার মামলার পরবর্তী শুনানি। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। উল্লেখ্য, গিধগ্রামের ৩০০ বছরের পুরোনো শিব মন্দিরেও নিচু জাত হওয়ায় সেখানকার ১৩০টি পরিবারকে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। তবেই প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর বুধবার এই সম্প্রদায়ের মানুষ এই মন্দিরে পুজো দিয়েছেন।