শিশুদের ওজন বৃদ্ধির মোকাবেলায় মিড ডে মিল নিয়ে নতুন পরামর্শ জারি করেছে কেন্দ্র সরকার। তাতে মিড ডে মিলে ভোজ্য তেলের ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিশুদের ওজন বৃদ্ধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীও যে উদ্বিগ্ন সে বিষয়টিও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। তবে, বাংলার শিক্ষক সংগঠনগুলি এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। তাদের বক্তব্য, স্কুল পড়ুয়াদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার জন্য তহবিল বৃদ্ধি করতে হবে।
জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে মিড ডে মিলের খাবারে ভোজ্য তেলের ব্যবহার ১০ শতাংশ কমাতে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ স্কুল শিক্ষা ও সাক্ষরতা বিভাগের জারি করা এই বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২৫’ এবং ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে স্কুলের শিশুদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়াও একটি সমীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি অতিরিক্ত ওজনের শিশুদের সংখ্যা ১৯৯০ সালে ৪ লক্ষ। ২০২২ সালে তা বেড়ে ১.২৫ কোটিতে পৌঁছেছে। বিশেষ করে নাবালক এবং শহুরে পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। এই বিষয়টি তুলে ধরে দৈনন্দিন খাবারে রান্নার তেলের ব্যবহার ১০ শতাংশ কমানোর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্কুলগুলিকে পুষ্টি বিষয়ক আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো, এছাড়াও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়েছে। পড়ুয়াদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনধারাকে উৎসাহিত করার জন্য শরীরচর্চা এবং যোগব্যায়ামের প্রচার করতেও বলা হয়েছে। পাশাপাশি মিড-ডে মিলের রাঁধুনি-সহায়কদের তেলের ব্যবহার কমাতে প্রশিক্ষণ দিতেও বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেঁকা বা সেদ্ধ রান্নার উপরেও জোর দিতে বলেছে কেন্দ্র।
তবে, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক সমিতিগুলির যুক্তি হল, শুধু তেল কমিয়ে দিলেই পুষ্টির উন্নতি হবে না। তাদের বক্তব্য, খরচ কমানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত তহবিল বৃদ্ধি করা, যাতে স্কুলগুলি আরও উন্নত মানের খাবার সরবরাহ করতে পারে। এবিষয়ে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বক্তব্য, প্রাথমিকে মিড-ডে মিলে মাথাপিছু বরাদ্দ ৬ টাকা ১৯পয়সা আর উচ্চ প্রাথমিকের মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৯ টাকা ২৯ পয়সা। তবে এটুকু বরাদ্দে ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া, এমনিতেই মিড-ডে মিলের রান্নায় ভোজ্য তেল সেভাবে পড়ে না। আর এই নিদান মানে হল তেল ছাড়া রান্না করতে বলা হচ্ছে। এছাড়াও, এই বিজ্ঞপ্তি আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া লক্ষ লক্ষ পড়ুয়াদের কথা ভেবে দেওয়া হয়নি বলে তাদের দাবি। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দাবি, মিড-ডে মিলের এই সামান্য বরাদ্দে পড়ুয়াদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করাটাই সমস্যা। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতিও উপযুক্ত বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে।