• কাঠামবাড়ি জঙ্গলে গাড়ি পরীক্ষা নিয়ে সংঘাত, পুলিশের হাতে প্রহৃত বনকর্মী
    এই সময় | ১৭ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, ক্রান্তি: গাড়ি বোঝাই আসবাবের কাগজপত্র পরীক্ষা নিয়ে বনকর্মী–পুলিশ সংঘাতে উত্তাল হলো জলপাউগুড়ির ক্রান্তি। অভিযোগ, হেনস্থার পাশাপাশি বনকর্মীদের মারধর করেন পুলিশ কর্মীরা। বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের তারঘেরা রেঞ্জের ঘটনা। মারধরের প্রতিবাদে ওদলাবাড়ি-ক্রান্তিগামী রাস্তা আটকে তারঘেরা চেকপোস্টের সামনে বিক্ষোভে সামিল হন বনকর্মীদের পরিবার–সহ বনবস্তিবাসীরা। অবরোধের খবর পেয়ে প্রশাসনের আধিকারিকরা এলাকায় আসেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে রাত আটটা নাগাদ বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।

    জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে আসবাবপত্র বোঝাই একটি গাড়ি কাঠামবাড়ি জঙ্গল দিয়ে আসার সময়ে তারঘেরা চেকপোস্টের কর্মীরা প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখার জন্য সেটিকে আটকান। গাড়ির চালক জানান, আসবাবপত্রগুলো একজন পুলিশকর্মীর।

    সেই পুলিশ কর্মী চেকপোস্টে এসে মালগুলি তাঁর বলে দাবিও করেন। যদিও তিনি ওই সামগ্রীর কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ। ফলে গাড়ি বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকে। আসবাবের নথি দেখাতে না পারলেও পুলিশ কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয়পত্র দেখান তিনি।

    এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে গাড়িটিকে ছেড়ে দেন বনকর্মীরা। ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পরে মাল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তারঘেরা রেঞ্জের চেকপোস্টের দুই বনকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ, তাঁদের মারধর করা হয়। যদিও রাতেই বনকর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হয়৷

    এই ঘটনার খবর চাউর হতেই রবিবার সকাল থেকে বনকর্মী–সহ বনবস্তির বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রবিবার বিকেলে তারঘেরা রেঞ্জের চেকপোস্টের সামনে বিক্ষোভে বসেন বনবস্তিবাসী। তারঘেরা–সহ ক্রান্তি ব্লকের কৈলাসপুর, মাগুরমারি, ষোলোঘরিয়া–সহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষজন বিক্ষোভে সামিল হন।

    এ বিষয়ে বনবস্তিবাসী সুমন ওঁরাও বলেন, ‘পুলিশের তরফে যে ভাবে কর্তব্যরত বনকর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনায় দোষীদের ক্ষমা চাইতে হবে।’

    একই দাবি জানান গৌরী ওঁরাও, অনিতা ওঁরাওরা। বিক্ষোভকারীরা দাবি করতে থাকেন, যে পুলিশ কর্মী সেই সময়ে রাতে আসবাবপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁকে ঘটনাস্থলে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। বিক্ষোভের খবর পেয়ে তারঘেরা রেঞ্জে আসেন বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের ডিএফও রাজা এম। তিনি বিক্ষোভাকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। পুলিশ কর্মীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে অনড় থাকেন বিক্ষোভকারীরা। খবর পেয়ে ক্রান্তি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীর আহমেদ বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাজির হন ঘটনাস্থলে। ছুটে আসেন মালের এসডিপিও দেশমুখ রোশন প্রদীপ এবং মাল থানার আইসি। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাঁরা।

    আলোচনার পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়, শনিবার রাতে যে পুলিশ কর্মী আসবাবপত্র নিয়ে তারঘেরা চেকপোস্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখাতে বলা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈকুণ্ঠপুরের ডিএফও বলেন, ‘গোটা ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।’

    মাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দেশমুখ রোশন প্রদীপ বলেন, ‘একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হয়েছে। ওই পুলিশকর্মীকে আসবাবপত্রের নথিপত্র বন দপ্তরকে দেখাতে বলা হয়েছে। না দেখাতে পারলে শাস্তি পেতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)