সুমন ঘোষ, বেলদা
‘নীল চা-এ থাকে ভরপুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। নীল চা পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। হজম ও পেটের সমস্যায় পুদিনা পাতার চা খুবই উপকারী। এ ছাড়াও অ্যাজ়মা ও কাশির সমস্যায় তৎক্ষণাৎ কাজ করে।’
ভাবছেন, চা প্রস্তুতকারক কোনও সংস্থার চটকদার বিজ্ঞাপন? না। নিখাদ এক চায়ের দোকান, নাম তার ‘চায়ের আড্ডা’। এ ভাবেই সেই দোকানের মালিক চা-প্রেমীদের ওয়াকিবহাল করে চলেছেন, বিশেষ এই পানীয়ের উপকারিতা বিচার করেই বসে পড়ুন এক কাপ চা নিয়ে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা বাসস্ট্যান্ডে এক গলির মধ্যে এমনই চায়ের দোকান দেখে প্রথম চটকায় সকলেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। ঢুকে পড়েন ‘আড্ডা’য়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তৈরি হতে থাকে এক অদ্ভুত ভালোলাগা। এই অভিনব আড্ডায় রোজ ভিড় জমান শতাধিক মানুষ।চায়ের উপকারিতা নিয়ে পরামর্শ ও ঝকঝকে কাচের কাপে চা দেওয়ার প্রথা বেলদা বাজারে তো দূর-অস্ত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই রয়েছে কি না, সন্দেহ।
কিন্তু এই দোকানের মালিক অভিজিৎ মাইতি ১৬ ধরনের চা বানাতে পারেন। দোকান জুড়ে বিভিন্ন ধরনের চায়ের ছবি ও তার উপকারিতা লেখা রয়েছে স্পষ্ট করে। দার্জিলিং চা থেকে সবুজ চা, জবা ফুলের চা থেকে তুলসি, পুদিনা, লেমন গ্রাস, কাশ্মীরি কাহওয়া। তালিকায় আরও রয়েছে গোলাপ ফুলের চা, হলুদ চা, গাঁদা ফুলের চা-ও!
মনে হতে পারে, উপকারিতা লেখা চায়ের দাম হয়তো বেশ দামি হতে পারে। এমন ভাবলে আবারও ঠকতে হবে। শুধু লেমন গ্রাস ও কাশ্মীরি কাহওয়া চায়ের প্রতি কাপের দাম ২০ টাকা। বাকি সবই ১০ টাকা বা ১৫ টাকা প্রতি কাপ। অভিজিৎ বলেন, ‘আমি যে ভাবে যত্ন নিয়ে চা বানাই, কলকাতা শহর হলে ন্যূনতম ৫০ টাকা প্রতি কাপ চা বিক্রি করতাম। কিন্তু বেলদা বাজারে তার উপায় তো নেই। তাই কম দামেই বেচতে হয়।’
সারাদিনে কত কাপ চা বিক্রি হয়? চার-পাঁচশো কাপ? অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘অত চা তো বানাতেই পারব না। মানুষ এসে রকমারি চায়ের অর্ডার দেন। সেটা বানাতেই অনেকটা সময় লাগে। তাই দেড়শো-দু’শো কাপের বেশি দিনে চা বানানোই কঠিন।’ হঠাৎ করে এমন শৌখিন মেজাজে চা বানানোর পরিকল্পনা মাথায় কী ভাবে এল?
অভিজিৎ জানান, আগে তিনি মোবাইল ফোন সারানোর কাজ করতেন। করোনা অতিমারির সময়ে সেই ব্যবসা পড়েছিল প্রবল মন্দায়। পরে একটি খাবারের দোকানও দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে সেই দোকান অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেনি। তখনই মাথায় আসে নতুন পদ্ধতিতে চা বানালে কেমন হয়? যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ।
এখন বেলদা বাজারে সবাই জানেন অভিজিতের দোকানের চায়ের গুণ। তার রকমারি স্বাদ পেতে সবাই ভিড় জমান সেখানে। কাচের কাপে সাজিয়ে দেওয়া চায়ের মৌতাত-ই যে আলাদা! বেলদা বাসস্ট্যান্ডের লাগোয়া অঞ্চলের লোকেদের কাছে এখন ‘ডেস্টিনেশন চায়ের আড্ডা’ তো জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এক কাপ চায়ে ‘তোমাকে চাই’-য়ের অমোঘ হাতছানি কে-ই বা উপেক্ষা করতে পারেন!