রাজ্য সরকারের ‘বিলম্বিত’ পদক্ষেপের কারণে দেশের কতটা ‘আর্থিক ক্ষতি’ হয়েছে জানতে চেয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছিলেন বঙ্গের এক বিজেপি সাংসদ। কেন্দ্রীয় সরকার সে প্রশ্নের জবাব বিশদেই দিল। কিন্তু লোকসভায় পেশ করা জবাবে ‘অর্থিক ক্ষতি’র প্রসঙ্গটি তারা এড়িয়েই গিয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর তৈলখনি প্রকল্পের ‘অগ্রগতি’ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন নদিয়ার রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার। খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রীর কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, অশোকনগর তৈলক্ষেত্র থেকে ‘খনিজ তেল উত্তোলনের ইজারা’ (পেট্রোলিয়াম মাইনিং লিজ় বা পিএমএল) পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিয়েছে কি না? জগন্নাথের আরও প্রশ্ন ছিল, কোন কারণে চার বছর ধরে রাজ্য এই ‘ইজারা’ বা ‘পিএমএল’ আটকে রেখেছিল? তার কারণে কতটা আর্থিক ক্ষতি এবং উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে?
খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপী সোমবার সংসদে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। ‘বিলম্বের’ কারণে উৎপাদন কতটা মার খেয়েছে, তিনি সে কথা স্পষ্ট করেই লিখেছেন। কিন্তু ‘আর্থিক ক্ষতি’ শব্দবন্ধের উল্লেখ তাঁর জবাবে নেই। কোনও আর্থিক অঙ্কের উল্লেখও সেখানে নেই।
কেন্দ্রের তরফে সংসদে জানানো হয়েছে, সপ্তাহ তিনেক আগে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় অনুমতি বা ‘ইজারা’ দিয়েছে। সেই ‘ইজারা’ আপাতত ১১ বছরের জন্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অশোকনগরে মাটির নীচে খনিজ তেল ও গ্যাসের ভান্ডার আবিষ্কৃত হয়েছিল অনেক দিন আগেই। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেখান থেকে তেল উত্তোলন শুরু করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েছিল। অশোকনগর-১ কূপ থেকে ওই তেল উত্তোলন করার কথা ছিল। প্রথমে মনে হয়েছিল ৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তৈলক্ষেত্রের তেল ওই কূপের মাধ্যমে তুলে আনা যাবে। পরে বোঝা যায় ৯৯.০৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ওই তৈলক্ষেত্রটি ছড়িয়ে রয়েছে। সে বছরের অক্টোবরেই রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্র ‘ইজারা’ বা ‘পিএমএল’ দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু রাজ্য সরকার ‘পিএমএল’ দেয়নি। মন্ত্রকের জবাবে আরও লেখা হয়েছে, এর পরে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আরও দু’টি চিঠি রাজ্যকে পাঠানো হয়। তাতেও কাজ হয়নি। তাই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে ফের রাজ্যকে এই অনুমতি বা ‘ইজারা’ দিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু তেল উত্তোলক সংস্থা ওএনজিসি সেই ‘ইজারা’র চিঠি পায় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের দেওয়া এই সময়সারণি থেকে স্পষ্ট যে, ২০২০ সালের বদলে তেল উত্তোলন শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালে। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছরের এই ‘বিলম্বে’র জেরে দেশের ‘বিপুল আর্থিক ক্ষতি’ হয়েছে বলে বঙ্গ বিজেপি যে তত্ত্ব খাড়া করতে চাইছে, তাতে কেন্দ্রের জবাব ‘অক্সিজেন’ জোগায়নি। মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রথম চার বছরে ওই খনি থেকে ১৮,২৭৪ কিউবিক মিটার খনিজ তেল তোলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রাজ্যের অনুমতি মিলতে দেরি হওয়ায় তা করা যায়নি। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের অঙ্গ হিসেবে ৩৫২ কিউবিক মিটার তেল অশোকনগর তৈলক্ষেত্র থেকে তোলা হয়েছে। বাকি ১৭,৯২২ কিউবিক মিটার খনিজ তেল এ বার তোলা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ওই হিসেব দেওয়ার সময়েও ‘ক্ষতি’ শব্দের ব্যবহার নেই। এমনকি, ‘উৎপাদন ক্ষতি’ শব্দবন্ধও নেই। অনুমতি বা ‘ইজারা’ মিলছিল না উৎপাদন পিছিয়ে গিয়েছে বলে মন্ত্রকের জবাবে লেখা হয়েছে। কিন্তু তার জেরে ‘ক্ষতি’ হয়েছে বলে খনিজ তেল ও গ্যাস মন্ত্রক একবারও লেখেনি।