• চালকের বৈধ লাইসেন্স না-থাকলেও বাসের দুর্ঘটনায় দিতে হবে ক্ষতিপুূরণ
    এই সময় | ১৮ মার্চ ২০২৫
  • চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সময়ে নবীকরণ হয়নি। সেই কারণে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেছিল সরকারি বিমা সংস্থা। বিমা সংস্থার যুক্তি ছিল, চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিলই না, বাসটি ভেঙেছিল গতির বিধিও। ফলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য নয়। বিমা সংস্থার কাছে বার বার আবেদন করেও কোনও ফল না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাসের মালিক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিপূরণ ও বাসের মেরামতির খরচ বাবদ বিমা সংস্থাকে তিন লক্ষ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    ২০১৮–র ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ একটি বাস চন্দ্রকোণার খেজুডাঙায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। উল্টো দিক থেকে আসা একটি দ্রুত গতির লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মারা যান বাসের চালক শ্রীকান্ত দে। দুর্ঘটনায় বাসটি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চন্দ্রকোণা থানায় কেস রুজু করা হয়। থানার মামলার বিস্তারিত-সহ জানানো হয় বিমা সংস্থা ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসের জন্যে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। দীর্ঘ টালবাহানার পরে ২০২০–র ২০ জুলাই বিমা সংস্থা ক্ষতিপূরণের আবেদন বাতিল করে জানায়, যে চালক বাসটি চালাচ্ছিলেন, তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৮–র ১৭ জুলাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি আর নবীকরণ করাননি। ফলে যে দিন দুর্ঘটনা ঘটে সে দিন চালকের বাস চালানোর বৈধ লাইসেন্সই ছিল না। সে জন্যে বাসটি কোনও ক্ষতিপূরণ পেতে পারে না। সব মিলিয়ে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছিল।

    শেষ পর্যন্ত বাসের মালিক পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। মামলার শুনানিতেও বিমা কোম্পানির তরফে একই কারণ দেখানো হয়। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা ফোরামের সভাপতি বিচারক সমীরণ দত্ত এবং সদস্য অংশুমতি নন্দ অবশ্য বিমা কোম্পানির যুক্তি নস্যাৎ করেছেন। নির্দেশে তাঁরা বলেছেন, ওই দুর্ঘটনায় বাসের চালক প্রাণ হারিয়েছেন এবং বাসটি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা কোনও ভাবে প্রমাণিত নয় যে চালকের দোষেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষতি। এই কারণে বাসের ক্ষতিপূরণের দাবি বাতিল করা যায় না। বিচারকেরা সুপ্রিম কোর্টের দু’টি নির্দেশেরও উল্লেখ করেন। সুপ্রিম কোর্ট একই রকম ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ক্ষতিপূরণের আংশিক দাবি মঞ্জুর করেছিল। এ ক্ষেত্রেও ক্ষতিগ্রস্ত বাসটির মালিককে মেরামতি বাবদ ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭০৬ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ৬০ হাজার টাকা দিতে বিমা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

  • Link to this news (এই সময়)