সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
কয়েক দিন আগেই বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত পেরিয়ে গিয়েছিল। পুরুলিয়ারও বিভিন্ন জঙ্গলেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। একদিকে ঝরে পড়া শুকনো পাতা অন্য দিকে, বাড়তে থাকা গরম— এই দু’টি বিষয় চিন্তায় রাখছে বন দপ্তরকে। তাই আগুনের মোকাবিলায় নিজস্ব ফায়ার ব্রিগেড গড়ে তুলছে বন দপ্তর। ছোট আকারে হলেও আপৎকালীন ভিত্তিতে যা কাজে আসবে বলে মনে করছেন বন কর্তারা।
পরীক্ষামূলক ভাবে ওই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার প্রয়োগও চলছে পুরুলিয়ার বিভিন্ন বনাঞ্চলে। গত বছর পুরুলিয়া জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে একশোরও উপরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। দোল মিটতেই জেলায় গরমের প্রকোপ বাড়বে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
এমনকী তাপপ্রবাহও চলতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এর মধ্যে আগুন লাগার কয়েকটি ঘটনাও ঘটে গিয়েছে। গত সোমবার আগুন লাগে বাঘমুন্ডির চড়িদার পাহাড়ে। বুধবার উকাদা এবং পাহাড়ের আপার ড্যামের কাছেও আগুন লাগে। সব জায়গায় বন দপ্তরের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। জানা গিয়েছে, ব্লোয়ারের সাহায্যে এই আগুন নেভানো হয়।
আগামী দিনে অবশ্য আরও বড় পরিকল্পনা করছে পুরুলিয়া বন বিভাগ। ছোট আকারের আগুন ব্লোয়ার মেশিনের সাহায্যে নেভানো সম্ভব হলেও আগুন বড় হলে এখনও মূল ভরসা ফায়ার ব্রিগেড। পুরুলিয়ার কয়েকটি জায়গায় ফায়ার ব্রিগেড থাকলেও গভীর জঙ্গলে স্বল্প সময়ে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির পৌঁছনো সহজ নয়। দেরি হলে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এই পরিস্থিতিতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন বনাধিকারিকরা। ফায়ার ফাইটিংয়ে সাধারণ জলের ট্যাঙ্কারকেই ইঞ্জিনে পরিণত করেছেন তারা। একটি ট্র্যাক্টরের সঙ্গে ট্যাঙ্কারটিকে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঘটনাস্থলে। তার পর পাম্পের সাহায্যে জল স্প্রে করা হচ্ছে। এই গাড়ি নিয়ে সহজেই জঙ্গলের শুঁড়িপথ দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায়। সেখানে ট্যাঙ্কার ছাড়াও ওয়াটার বডি থাকলে সেই জলও ব্যবহার করা যাচ্ছে।
বাঘমুন্ডির উকাদার যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্য গৌরচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘আগুনে জঙ্গলের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। তাই খুব সাবধানে থাকতে হয়। আগুন দেখলেই বনাধিকারিকদের খবর দেওয়া ছাড়াও আমরা নিজেরাও আগুন নেভানোর কাজে লেগে পড়ি। জলের ট্যাঙ্কার ব্যবহার করে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা দারুণ কার্যকরী হবে।’
বাঘমুন্ডির রেঞ্জ অফিসার সাহেব মাহাতোর কথায়, ‘গরমের সময়ে অসাবধানতা থেকে জঙ্গলে আগুন লেগে যায়। এই আগুন নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে আগুন লাগলে স্থানীয় বন কমিটির সদস্যরা যেমন এগিয়ে আসেন, তেমনই সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেড়েছে সচেতনতা। বন দপ্তর আগুন নেভানোর জন্য তৎপর রয়েছে। নতুন নতুন পদ্ধতিরও ব্যবহার করা হচ্ছে।’
পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ ট্যাঙ্কারের সাহায্যে আগুন নেভানোর উদ্যোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। পুরসভা থেকে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে প্রচুর পরিত্যক্ত ট্যাঙ্কার রয়েছে। সেগুলিকে নিয়েই আমরা আগুন নেভানোর একটি পদ্ধতি তৈরি করেছি। অল্প সময়ের মধ্যেই এতে আগুন আয়ত্তে নিয়ে আসা সম্ভব। বাঁচানো যায় জঙ্গলকে। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণে বেশ কিছু ব্লোয়ার কেনার কথাও ভাবা হচ্ছে।’