এই সময়, হাবরা: অশোকনগর থেকে বনগাঁ লোকালে উঠেছিলেন বৃদ্ধা। গন্তব্য ছিল হাবরা স্টেশন। কিন্তু ভিড় আর গরমে ট্রেনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। হাবরা স্টেশনে পৌঁছতেই তিন মহিলা যাত্রী ধরাধরি করে প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে ছিলেন অসুস্থ বৃদ্ধাকে।
হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্যের জন্য তিন মহিলা প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীদের কাছে আবেদনও করেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। প্রায় দশ মিনিট প্ল্যাটফর্মে পড়েছিলেন অসুস্থ বৃদ্ধা। শেষে তিন মহিলা একটা টোটো ডেকে হাবরা হাসপাতালে নিয়েও এসেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসক ওই বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সোমবার দুপুরে এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল হাবরা। ওই তিন মহিলা যাত্রীর আফশোস একটাই, ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসলে হয়তো ওই বৃদ্ধাকে বাঁচানো যেত। এর জন্য হাবরা প্ল্যাটফর্মের যাত্রীদের অমানবিকতাকেই দায়ী করেছেন পূজা কুণ্ডু, সুপর্ণা খাতুনরা।
এ দিন দুপুরে অশোকনগর স্টেশন থেকে বনগাঁ লোকাল ট্রেনে উঠেছিলেন আনুমানিক ৭০ বছরের বৃদ্ধা আরতি কর্মকার। তাঁর বাড়ি হাবরার মানিকতলায়। কামরায় উঠে বসার জায়গা পাননি তিনি। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা। অচৈতন্য হয়ে কামরার মধ্যে পড়ে যান। বৃদ্ধার পাশেই ছিলেন পূজা। তিনি অসুস্থ বৃদ্ধার চোখেমুখে জলের ঝাপটা দেন। এর মধ্যে ট্রেন পৌঁছয় হাবরা স্টেশনে। পূজা, সুপর্ণা খাতুন এবং আরও এক তরুণী ধরাধরি করে অসুস্থ বৃদ্ধাকে প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে আনেন।
হাবরা স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সে সময়ে অনেক যাত্রী হাজির ছিলেন। অসুস্থ বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা ভ্যান বা টোটো আনার জন্য আবেদন করেন পূজা, সুপর্ণারা। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা দূর থেকে বিষয়টি দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেননি তিন মহিলা যাত্রীর সাহায্যে। মিনিট দশেক পড়ে থাকার পর খিঁচুনি শুরু হয় আরতির। সহযাত্রীরা এগিয়ে না আসায় তিন মহিলা অসুস্থ বৃদ্ধাকে ধরাধরি করে একটা টোটোয় তুলে নিয়ে আসেন হাবরা হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল।
হাসপাতালে নিয়ে আসার পরেই চিকিৎসক ওই বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত বৃদ্ধার সঙ্গে থাকা ব্যাগে ছিল একটা ছাতা, ব্যাঙ্কের পাসবই এবং টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ। সেটা দেখেই বৃদ্ধার নাম পরিচয় জানা গিয়েছে।
হাসপাতালে দাঁড়িয়ে পূজা বলেন, ‘অসুস্থ মানুষটা প্ল্যাটফর্মে ১০ মিনিট পড়েছিলেন। আমরা অনেকের কাছ সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলাম। কেউ এগিয়ে এলো না। কেউ আমাদের সাহায্য করেনি। ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত।’
সুপর্ণা খাতুন বলেন, ‘ওই বৃদ্ধা আমাদের পরিবারের একজন হতে পারতেন। আমরা মানবিকতার টানে ট্রেন থেকে নামিয়ে আনি ওঁকে। কিন্তু কেউ সাহায্য করল না। দেরি হওয়ায় বৃদ্ধাকে বাঁচাতে পারলাম না।’