সৌমিত্র ঘোষ, বালি
মার্চের গোড়ায় এখনও গ্রীষ্মের তীব্রতা সে ভাবে হানা দেয়নি। তবু শিয়রে পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন বালির পুর প্রশাসন থেকে সাধারণ নাগরিক, সকলেই। গত এক–দেড় বছরে বালিতে বেশ কয়েক বার জল–সঙ্কটের তীব্রতায় নাজেহাল হয়েছেন পুর প্রশাসনের কর্তা থেকে শুরু করে জলবিভাগের কর্মীরাও। ভুগেছেন সাধারণ মানুষও।
জরুরি পরিস্থিতিতে পানীয় জলভর্তি ট্যাঙ্ক এলাকায়–এলাকায় পৌঁছে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। সামনে রয়েছে প্রখর গ্রীষ্মের তিন–চারটি মাস। এ সময়ে গঙ্গার জলস্তর তলানিতে নামার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চাহিদামতো জলের উৎপাদন ও সরবরাহ কমতে বাধ্য। তার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই জল উত্তোলনের পাম্প থেকে শুরু করে সরবরাহ পাম্প বিকল হওয়ার মতো ঝঞ্ঝাটও রয়েছে।
শুধুমাত্র বালি পুর এলাকার বালি ও বেলুড়ের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে ২০১৩ সালে বেলুড়ের পঞ্চাননতলায় গঙ্গার ধারে কেএমডিএ–র জল–প্রকল্প চালু হয়। প্রকল্পের জল উৎপাদন ক্ষমতা তথা লক্ষ্যমাত্রা প্রতিদিন ৪৮ মিলিয়ন লিটার হলেও, বালি–বেলুড়ের চাহিদা মেটাতে ২৮ থেকে ৩০ মিলিয়ন লিটারের বেশি জলের প্রয়োজন পড়েনি এত দিন।
কিন্তু প্রকল্প চালুর কয়েক বছর পর থেকেই প্রকল্পের কাছাকাছি বেলুড় মড়াপোড়া ঘাট বা বলাইয়ের মায়ের ঘাটের কাছে গঙ্গার যে জায়গা থেকে জল উত্তোলন করা হয়, সেখানে পলি জমে, চড়া পড়ে, গঙ্গার নাব্যতা ক্রমে হ্রাস পাওয়ায় জল উত্তোলনের তীব্র সমস্যা দেখা দেয়। গ্রীষ্মে গঙ্গার জলস্তর কমে সেই জল আরও কমে যাওয়ায় গঙ্গা থেকে জল তোলাই এখন বড় ঝক্কি হয়ে দেখা দিয়েছে।
পাশাপাশি, প্রকল্পের পাম্পগুলির সময়মতো পরিচর্যার অভাবে প্রায়ই সেগুলি বিকল হয়ে পড়ছে। সমস্যা হচ্ছে জল সরবরাহের। কখনও সরবরাহ পাম্প, তো কখনও জল উত্তোলনের পাম্প অকেজো হয়ে পড়ছে প্রায়ই। সঙ্গে মাত্র ২-৩ ফুট নাব্যতা থেকে জল তোলার ফলে জলের সঙ্গে মিশে থাকা পলি ও মাটি পাম্পের সাকশান অংশে জমে পাম্পগুলির কার্যকারিতা কমিয়ে ফেলছে।
এ সব বাস্তব কারণে জল নিয়ে মাথা–ব্যথা কিছুতেই যাচ্ছে না পুর প্রশাসনের। একই সঙ্গে অশনি সঙ্কেত দেখছেন সাধারণ মানুষও। বালির নানা এলাকার নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা কেউই কয়েক বছর আগের মতো অঢেল জল পাচ্ছেন না। ব্যবহারের জল তো দূর অস্ত, অনেক সময়ে টান পড়ছে পানীয় জলেও।
পুরসভা সূত্রে খবর, এখন মেরেকেটে প্রতিদিন সর্বাধিক ১৮ মিলিয়ন লিটার জল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তার সঙ্গে শ্রীরামপুর ওয়াটার ওয়ার্কস থেকে পাওয়া খুব বেশি হলে ৪-৫ এমএলডি জল। সঙ্কট দূর করতে গত দু’বছর ধরে জল উত্তোলনের জন্য বিকল্প জায়গার অনুসন্ধান করে বালি রবীন্দ্র ভবনের কাছে গঙ্গার অনেকটা ভিতরে, বিকল্প জল উত্তোলনের ইনটেক পয়েন্ট নির্বাচন করা হয়েছে।
সেখানে নতুন ইনটেক পয়েন্ট তৈরি করার জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি। এখন শুধু কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষা। পুর প্রশাসন সূত্রে খবর, এখন ওই কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা হচ্ছে, কাজ দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে। তবে আগামী গ্রীষ্মের ভোগান্তি কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, সেটাই দেখার।