এই সময়, বর্ধমান: খণ্ডঘোষ থানার সগরাই পঞ্চায়েতের চিন্তামণিপুর গ্রামে মন্দিরে তালা দেওয়াকে ঘিরে গ্রাম ষোলো আনা কমিটির দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ লেগে যায়। দু’পক্ষ একে অন্যকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর, লাঠি, হাঁসুয়া, মদের বোতল ভেঙে আক্রমণ করে। পুলিশ আসার আগেই ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন শীতল খাঁ (৬৬) এক ব্যক্তি।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আরও আট জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিষেক মণ্ডলের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অশান্তি এড়াতে গ্রামে এখনও মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছে শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের নামও। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০ জনকে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে গ্রামের দোল কালীপুজোয় অশান্তির জন্য গ্রাম ষোলো আনা কমিটির থেকে বেশ কিছু পরিবারকে পুজোয় সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, তারা পুজো দিতে পারলেও কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি শ্রীকান্ত খাঁ, তাঁর ভাই গৌরহরি খাঁ–সহ অনেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সোমবার সকালে তাঁরা মন্দিরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। বাদ পড়া পরিবারগুলিও মন্দিরের সামনে চলে আসে। এতেই শুরু হয় বিপত্তি। অন্য পক্ষের লোকেরা মন্দিরের তালা ভাঙতে এলেই বিবাদ চরমে পৌঁছায়। শুরু হয় ইটবৃষ্টি।
আহত আদিত্য খাঁ বলছিলেন, ‘রবিবার রাত থেকেই ওরা মাইক বাজানো নিয়ে অশান্তি শুরু করেছিল। সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য রাতে বিশেষ অশান্তি করতে পারেনি। সকালে এসে দেখি শ্রীকান্ত খাঁ তাঁর লোকজনদের নিয়ে এসে মন্দিরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে এমনই অশান্তি করার জন্য গ্রাম ষোলো আনা কমিটি থেকে ওদের ৮-১০টি পরিবারকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। তার শোধ নিতে ওরা এ বার তালা ঝুলিয়ে দিয়ে মন্দিরের দখল নিতে এসেছে। সেই সময়ে আমরা অল্প কয়েকজন ছিলাম। ওদের অতর্কিত হামলায় আমার কাকা মারা গিয়েছেন। আরও আট জন আহত হয়েছে।’
নিহত শীতল খাঁ–এর ছেলে অজয় খাঁ বলেন, ‘এই ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন শাসকদলের বুথ সভাপতি শ্রীকান্ত। হামলাকারীদের মধ্যে রয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য ও শাসকদলের লোকেরাও। ওরাই আমার বাবাকে খুন করেছে।’ খণ্ডঘোষ থানায় ১৩ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ইতিমধ্যে শ্রীকান্ত, তাঁর ভাই গৌরহরি–সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এসডিপিও অভিষেক মণ্ডল বলেন, ‘গ্রাম ষোলো আনা কমিটির দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩ জনের নামে এফআইআর হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তল্লাশি অভিযান চলছে। গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোল কালীপুজোর পরে মন্দিরে তালা দেওয়া নিয়ে অশান্তি শুরু হয়।’
খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপার্থিব ইসলাম এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, এটি পুরোপুরি গ্রাম্য বিবাদ। পরিকল্পনা করে এখন এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাঁদের তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করা হচ্ছে, তাঁদের কিন্তু আলাদা একটি পরিচিতিও রয়েছে। এটা একেবারেই খাঁ পরিবারের সদস্যদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অহেতুক সেখানে রাজনীতিকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’