রাকিব ইকবাল, আমতা
মোবাইলের রিলস, গেমসে বুঁদ শিশুমন। ভুলেছে মাঠে যাওয়া। স্কুল থেকে ফিরেই বাবা-মা–র ফোন নিয়ে বসে যাওয়া। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে চোখ। স্মার্ট ফোন সেই করোনা কালে হাতে ধরানো হয়েছিল, পড়াশোনার সুবিধার্থেই। কিন্তু এখন তা হয়ে উঠেছে ‘এন্টারটেনমেন্ট’–এর অতি আবশ্যক এক উপকরণ। ৬ থেকে ১৬, সব বয়সই মজে আছে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। ক্ষতি হচ্ছে শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায়।
এ বার শিশুদের মোবাইলের প্রতি আসক্তি কাটাতে পাড়ায়–পাড়ায় ঘুরছেন শিক্ষক–শিক্ষিকারা। যাচ্ছেন অভিভাবকদের বাড়ি। এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে হাওড়া গ্রামীণের আমতার মেনকা স্মৃতি বিদ্যামন্দির নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়। মোবাইল ফেলে শিশুরা যাতে মাঠে যায়, তাই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ফুটবল, ক্রিকেট বল।
মেনকা স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক শেখ গোলাম ইয়াজদানি থেকে শুরু করে সহশিক্ষক সৌভিক চৌধুরী, অভিজিৎ রায়, সুস্মিতা মণ্ডল, অচিন্ত্য সামন্ত, সোমেন্দ্রনাথ দাস, প্রসেনজিৎ মাজী, সুদীপ কাড়ার, সোনালি পালরা পালা করে পাড়ায়–পাড়ায় পড়ুয়াদের বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের নিয়ে বসছেন বাড়ির উঠানে। চলছে কথোপকথন। একটানা ১৫ ধরে চলছে এই কর্মসূচি। অমরাগড়ি, কাঁকরোলের, চক জনার্দন, ঘনশ্যামচকের বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা ঘুরছেন।
প্রধানশিক্ষক গোলাম ইয়াজদানি বলেন, ‘অভিভাবকরা সচেতন হলেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। আমাদের লক্ষ্য, তাদের মোবাইল আসক্তি কমানো।’ সহশিক্ষক সৌভিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারা মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত। পড়ার প্রতি মনোযোগী কম। সব জায়গাতেই এমন চিত্র ধরা পড়েছে।
’শিক্ষকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী স্মৃতিজা রায়ের দাদু অরবিন্দ রায় বলেন, ‘আমরা খুব খুশি শিক্ষক মহাশয়দের এই ভূমিকায়।’ শিক্ষকদের এই ভূমিকাকে পূর্ণ সমর্থন করে অভিভাবক সাবির মল্লিক, হোসনারা মল্লিক, অরবিন্দ রায়রা বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের মোবাইল আসক্তি ঝেড়ে ফেলতে শিক্ষকদের পরামর্শমতো কাজ করব।’
কিন্তু এত সব চেষ্টার পরেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মজে থাকা মনকে কী ভাবে সম্ভব বাস্তবের মাটিতে ফেরানো? খেলার মাঠে নয়, মোবাইলের স্ক্রিনেই যারা ‘নকল খেলাঘর’ বানিয়ে তুলেছে, তার থেকে সরিয়ে আনার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও। তাঁদের একাংশ এই বিষয়ে একমত। একটা সময় পরে বিষয়টা আর অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা তারই প্রমাণ। শুধুমাত্র মোবাইল হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার কারণেই একাধিক নাবালক–নাবালিকা আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছে সদ্য অতীতে। গ্রাম থেকে শহর— বাস্তবটা একই রকম। কিন্তু গ্রামীণ অঞ্চলের সব পরিবারের মধ্যে সেই সচেতনতাও নেই, সামর্থ্যও না, যে তাঁরা মনোবিদের দ্বারস্থ হবেন।
তাই শত প্রশ্ন ছাপিয়েও গ্রামীণ কোনও নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য।