এই সময়, মেদিনীপুর: স্বামীর পেট্রল পাম্প রয়েছে। নিজের পাকা বাড়িও রয়েছে। কিন্তু মাটির বাড়ি দেখিয়ে তাঁর স্ত্রী ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে বাড়ি পেলেন! পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। এই নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি।
বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পেট্রল পাম্পের মালিকের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাই তাঁর স্ত্রী ওই বাড়ি পেয়েছেন। এ দিকে, বাড়ি পাওয়ার যাঁরা যোগ্য তাঁরা বাড়ি পাচ্ছেন না। পেট্রল পাম্পের মালিকও স্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতাদের জন্যই তিনি বাড়ি পেয়েছেন।
ক্ষীরপাই পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটাল-চন্দ্রকোণা রাজ্য সড়কের পাশেই রয়েছে প্রভাত পানের পেট্রল পাম্প। তিনি ক্ষীরপাইয়ের পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পানের নিকট আত্মীয় বলে পরিচিত। কলকাতায় থাকলেও প্রভাতের স্ত্রীর আধার ও প্যান কার্ড ছিল ক্ষীরপাইয়ের। তাই প্রভাতের স্ত্রী জ্যোৎস্না পান বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলেন। এবং মাটির বাড়ি দেখিয়ে তিনি বাড়ি পান।
প্রশ্ন উঠেছে কার মাটির বাড়ি দেখিয়ে তিনি পাকা বাড়ি পেলেন? শাসকদলের ভয়ে সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বলে দাবি বিরোধীদের। বিজেপির অভিযোগ, আবাস যোজনার বাড়ির প্রকল্প নিয়ে সব জায়গায় তৃণমূলের লোকজন দুর্নীতি করেছেন। যাঁদের বাড়ির প্রয়োজন তাঁরা বাড়ি পাননি। যাঁদের পাকা বাড়ি আছে তাঁরা তৃণমূলের লোকজনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন। বিজেপি নেতা কার্তিক সরেন বলেন, ‘উপযুক্ত ব্যক্তিরা বাড়ি পাচ্ছেন না। আর এ দিকে পেট্রল পাম্পের মালিকের স্ত্রী পুরসভা এলাকায় আবাসের বাড়ি পাচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে এই বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এটাই তো তৃণমূলের কালচার।’
উপভোক্তা জ্যোৎস্নার স্বামী প্রভাত বলেন, ‘পুরো পেট্রল পাম্পটা আমার নয়। পাম্পের কিছুটা শেয়ার রয়েছে। আমার মাটির বাড়ি ছিল। সেটা এখন নেই। অনেক কষ্ট করে ব্যাবসা দাঁড় করিয়েছি। আমি আমার স্ত্রীকে একটা ছোট জায়গা উপহার হিসেবে দিয়েছি। তাঁর উপরেই আমার স্ত্রীর নামে আবাস প্রকল্পের একটি বাড়ি তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর আমার আত্মীয়। কিন্তু এই বাড়ি তাঁর জন্য আমি পাইনি। বাড়ি দিয়েছেন তৃণমূলের কাউন্সিলার। আমার মাটির বাড়ি ছিল তাই পাকা বাড়ি পেয়েছি। কোনও ভুল নয়।’
জ্যোৎস্না পান ও প্রভাতের আদি বাড়ি ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আল্পনা রানি পাত্র বলেন, ‘আমি ওই বাড়ির জন্য সুপারিশ করনি।’ বাড়িটি তৈরি হয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার নিতাই সিং বলেন, ‘এই বাড়ি আমার সমায়ে হয়নি। আমি কাউন্সিলার হওয়ার আগেই তালিকা তৈরি হয়েছিল। তখন হয়তো নাম উঠেছে তালিকায়।’
তবে বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দুর্গাশঙ্কর বলেন, ‘জ্যোৎস্না পান বাড়ির জন্য আরও দুই কিস্তির টাকা পাবেন। আমি বিষয়টি জানার পরে তাঁর টাকা আটকে দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নেব।’