• প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নামে মহিলাকে বাড়িতে ডেকে ধর্ষণ! দিনহাটায় গ্রেফতার তৃণমূল নেতা
    আনন্দবাজার | ১৮ মার্চ ২০২৫
  • চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহিলার কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে ঠকানো এবং ধর্ষণের অভিযোগ তৃণমূলের এক নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। কোচবিহারের দিনহাটার ঘটনা। অভিযুক্ত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। মঙ্গলবার তাঁকে পাকড়াও করা হয় বলে খবর। যদিও নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, অভিযোগ দায়েরের সময়ে পুলিশ তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। পরে ‘চাপে পড়ে’ গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে।

    পুলিশ সূত্রের খবর, দিনহাটার এক মহিলাকে চাকরির টোপ দেন ওই তৃণমূল নেতা। অভিযোগ, মেয়েকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার চাকরি দেবেন বলে প্রথমে তাঁর বাবার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নেন তিনি। তার পর দীর্ঘ সময় কেটে যায়। চাকরি আর হয়নি।

    হঠাৎ গত ১৪ মার্চ ওই মহিলাকে খবর দেওয়া হয়, তাঁর চাকরির ইন্টারভিউ রয়েছে, তাই দেখা করতে হবে। সেইমতো তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেখা করেন ওই মহিলা। অভিযোগ, তাঁকে গাড়ি করে একটি ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন তৃণমূল নেতা। এমনকি, ধর্ষণের সময়কার ছবি এবং ভিডিয়ো দিয়ে ব্ল্যাকমেল করেন অভিযুক্ত। মহিলাকে হুমকি দেওয়া হয়, টাকা ফেরত চাইলে তাঁর স্বামীকে ওই সব ছবি এবং ভিডিয়ো পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে ওই ছবি, ভিডিয়ো। তাই ভয়ের চোটে প্রথমে মুখ খুলতে পারেননি ‘নির্যাতিতা’।

    পরে মেয়ের কাছ থেকে পুরো ঘটনার কথা শুনে দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বাবা। থানায় গিয়েছিলেন মহিলা নিজেও। তার প্রেক্ষিতে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে।

    ‘নির্যাতিতা’র অভিযোগ, ধর্ষণের পর তাঁকে মদ খাওয়ানোর জন্য জোরাজুরি করেন ওই তৃণমূল নেতা। তিনি তা-ও মদ খাননি। তখন রেগেমেগে মদের বোতল দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন অভিযুক্ত।

    পুলিশ সূত্রের খবর, দিনহাটা মহিলা থানায় তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং চাকরি দেওয়ার নামে করে টাকা তোলার অভিযোগ দায়ের করেছেন ‘নির্যাতিতা’ ও তাঁর বাবা। যদিও মহিলার বাবার অভিযোগ, ‘‘গতকাল (সোমবার) থানায় লিখিত অভিযোগপত্রের ‘রিসিভ কপি’ দেওয়া হয়নি। আজ (মঙ্গলবার) সেটা দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর এ-ও অভিযোগ, দিনহাটা মহিলা থানার ওসি তাঁকে জানিয়েছিলেন রাতে গ্রেফতারির পরে অভিযুক্ত পালিয়ে গিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে অবশ্য থানায় ‘আত্মসমর্পণ’ করেন অভিযুক্ত। পুলিশ ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করেনি।

    কোচবিহারের বিজেপি জেলা সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বোসের কটাক্ষ, ‘‘চুরি-ছিনতাই থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা, ধর্ষণ— এই সমস্ত অরাজক পরিস্থিতি আমরা এই সরকারের আমলে বারবার দেখতে পাচ্ছি। দিনহাটার ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শাসকদলের অঞ্চল সভাপতি চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন এবং যিনি টাকা দিয়েছেন, তিনি চাকরি তো পাননি, উল্টে ধর্ষিত হলেন!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্যাতিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই অঞ্চল সভাপতিকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে কি না, আমরা নিশ্চিত নই। এ নিয়ে বিজেপি আন্দোলনে নামবে।’’ তৃণমূলের তরফে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)