• পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র কঙ্কনা বাওড়ে হবে পর্যটন কেন্দ্র
    এই সময় | ১৯ মার্চ ২০২৫
  • আশিস নন্দী, গোবরডাঙ্গা

    উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা, স্বরূপনগর, গাইঘাটা ব্লকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য জলাশয়। স্থানীয়রা এগুলোকে বলে বাওড়। তার মধ্যে অন্যতম কঙ্কনা বাওড়। যার এক দিকে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বসিরহাটের স্বরূপনগর। অন্য দিকে গোবরডাঙ্গা। ভৌগলিক দিক থেকে অবশ্য কঙ্কনা বাওড়ের বেশিরভাগটাই পড়ছে গোবরডাঙ্গার মধ্যে। এক সময় কঙ্কনা বাওড়ের আকৃতি ছিল বিশাল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিসর অনেকটাই কমেছে।

    আগের থেকে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে জলাশয়ের নাব্যতা। ছোট হতে হতে কঙ্কনা এখন অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদে পরিণত হয়েছে। তবু তার আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি। শীত ও বসন্তে কঙ্কনা বাওড়ে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখিদের। তাদের টানে বহু মানুষ ভিড় করে এখানে। পাখি দেখতে দূর–দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। সেই কঙ্কনা বাওড়কে পুরো দস্তুর একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতি। তার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির তরফে আবেদন জানানো হয়েছে রাজ্য পর্যটন দপ্তরকে। এই খবরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন এলাকার মানুষ।

    সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবরডাঙ্গা এবং স্বরূপনগরের মধ্যে অবস্থিত কঙ্কনা বাওড়ের মোট আয়তন প্রায় ২৩০ একর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এক সময় এটা যমুনা নদীর অংশ ছিল। স্থানীয় মৎসজীবীরা এখানে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীতে যমুনা নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। নদীর বাঁকে জল জমে তৈরি হয়েছে এই অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ। বর্তমানে কঙ্কনা বাও়ডকে যমুনা নদীর সঙ্গে যুক্ত করেছে একটি খাল। যা রত্না খাল নামে পরিচিত। খালের মাধ্যমে যমুনা নদীর জল ঢোকে কঙ্ক‍‍না বাওড়ে।

    গত বেশ কয়েক দশক ধরে এই জলাশয় পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়। মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখিদের দেখা মেলে। এই সময় রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরবঙ্গ, ওডিশা থেকে সিঁথি হাঁস, লালিঝুটি ভুঁতি হাঁস, রামচ্যাগা, নর্দান পিনটেল–সহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কঙ্কনা বাওড়ে ডেরা বাঁধে। কঙ্কনা বাওড়ের চারিদিকে রয়েছে সবুজের সমারোহ। রয়েছে নানা ধরনের গাছ–গাছালি। সেই পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে পরিযায়ী পাখিরা। পরিযায়ী পাখিদের ক্যামেরা বন্দি করতে কলকাতা–সহ দূরের জেলা থেকে পক্ষীপ্রেমীরা ভিড় করেন গোবরডাঙ্গায়।

    গোবরডাঙ্গা স্টেশনে নেমে বাস কিংবা অটোয় চেপে খুব সহজেই কঙ্কনা বাওড়ে আসা যায়। আবার মছলন্দপুর থেকেও আসা যায়। ফলে পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে এখানে। তা সত্ত্বেও সরকারি অবহেলার শিকার কঙ্কনা বাওড়। নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়ছে জলজ প্রাণীরা। পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যাও কমে গিয়েছে।

    স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকমতো সংস্কার না হওয়াতেই এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কচুরিপানা ঠেকাতে করতে কেউ কেউ জলাশয়ে রাসায়নিক ছড়াচ্ছে। তাতে জলাশয় দূষিত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুবল ধর বলেন, ‘কঙ্কনা বাওড়ের গভীরতা কমে যাওয়ায় প্রত্যেক বর্ষায় বৃষ্টির জল উপচে আশপাশের এলাকাকে প্লাবিত করছে। তার ফলে গোবরডাঙ্গা এবং স্বরূপনগরের দিকের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ফলে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। আমরা চাই, এই জলাশয়কে ঘিরে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে উঠুক। তাতে এই এলাকার অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।

    স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র কর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, কঙ্কনা বাওড়কে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গোড়ে তোলা। বিষয়টি নিয়ে আমরা পর্যটন দপ্তরের কাছে আবেদন জানিয়েছি। এর জন্য কিছুটা সময় লাগলেও আমরা আশাবাদী।’

  • Link to this news (এই সময়)