মধ্য মার্চেই জ্বালা ধরানো গরম। শুকিয়ে যাচ্ছে নদী। ক্রমশ বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের স্বাস্থ্য। উষ্ণায়ণের ক্রমবর্ধমান ইঙ্গিতে নগর বাঁচাতে পরিবেশরক্ষাই একমাত্র দাওয়াই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পেট্রল-ডিজেলের ধোঁয়া থেকে মুক্তি পেতে গ্রিন গাড়ির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে কলকাতার বুকে দূষণহীন যান হিসেবে ট্রামের গুরুত্ব সামনে তুলে আনছেন পরিবেশপ্রেমীরা। সেই ট্রাম বাঁচানোর লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এ বারও কলকাতায় চলে এসেছেন মেলবোর্নের প্রাক্তন ট্রাম কন্ডাক্টর রবার্তো ডি আন্দ্রেয়া। তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে এ বার রয়েছেন আরও চার অস্ট্রেলীয়। প্রত্যেকেই চান, পরিবেশরক্ষায় কলকাতায় ট্রাম চলুক তার নিজের ছন্দে।
আগামী ২৮-৩১ এই চার দিন ধরে চলবে কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রা। তার জন্য এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। রাজ্য সরকারের একটি ট্রাম ভাড়া নিয়ে চালানো হবে উৎসবের চার দিন। ২৫ তারিখ থেকে সেই ট্রাম সাজিয়ে তুলবেন চিত্রশিল্পী সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, পিংলার পটশিল্পী স্বর্ণ চিত্রকর ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁরা পটের গানও গাইবেন।
সোমবার কলকাতায় পৌঁছে ধর্মতলার একটি হোটেলে উঠেছেন রবার্তো। তিনি জানাচ্ছেন, আজকের দিনে ডি-কার্বোনাইজিং ট্রান্সপোর্ট হিসেবে গ্লোবাল ওয়ার্নিংয়ের বিরুদ্ধে বড় হাতিয়ার ট্রাম। তাঁর কথায়, ‘বিশ্বের সব সিটি লাইট রেল হিসেবে ট্রাম ফিরিয়ে আনছে। এর লক্ষ্যই হচ্ছে, ভিড় কমানো, দূষণমুক্তি ও কার্বন নিঃসরণ।’ ট্রামযাত্রার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন রক্ষার বার্তাও দেওয়া হবে। রবার্তোদের কথায়, সুন্দরবনের সঙ্গে কলকাতা নগরীর স্বাস্থের যোগ রয়েছে। ফলে কলকাতাকে বাঁচাতে গেলে সুন্দরবনকে রক্ষা করা আগে দরকার। সেই জায়গা থেকেও ট্রামের ভূমিকা রয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ট্রামযাত্রার আর্টিস্টিক ডিরেক্টর মহাদেব শী।
এ বিষয়ে ৩১ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটেয় সুন্দরবন ও কলকাতার জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে আইসিসিআর রবীন্দ্রনাথ টেগোর সেন্টার সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে। এসপ্ল্যানেড ট্রাম টার্মিনাসে ওই চার দিন সন্ধেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও উঠে আসবে সুন্দরবন প্রসঙ্গ। সেখানে তৈরি করা হবে নৌকোর আদলে মণ্ডপ। সুন্দরবনের পরিবেশের বিভিন্ন ধ্বনি নিয়ে হবে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। এ ছাড়া উৎসবের দিনগুলোয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়িয়াহাট-এসপ্ল্যানেড-শ্যামবাজার রুটে বিশেষ ওই ট্রামটিতে বিনামূল্যে ভ্রমণ করতে পারবেন কলকাতার মানুষ।