• ছৌ মরশুমে চড়িদায় কোটি টাকার মুখোশের বরাত, পুরুলিয়ায় চাঙ্গা গ্রামের অর্থনীতি
    প্রতিদিন | ১৯ মার্চ ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ছৌ নাচের মরশুমে লক্ষ্মীলাভ পুরুলিয়ার মুখোশ শিল্পীদের। চৈত্র থেকে একেবারে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার গ্রামে, গ্রামে বিভিন্ন মেলায় ছৌ নাচের প্রদর্শন হয়ে থাকে। আর তাই চৈত্র পড়তেই ছৌ নাচের মুখোশের বরাতের ছড়াছড়ি। চৈত্রের একেবারে দোরগোড়াতেই প্রায় কোটি টাকার বরাত পেয়েছেন পুরুলিয়ার মুখোশ গ্রাম চড়িদার হস্তশিল্পীরা। সেই সঙ্গে জুড়েছে পলাশের মরশুম। সব মিলিয়ে নতুন আর্থিক বছরের আগে মুখোশ গ্রামের অর্থনীতি একেবারে চাঙ্গা।

    এই পলাশের সময় এবার চড়িদায় বনদুর্গা, কৃষ্ণ এবং একেবারে নতুন লুকে কিরাত-কিরাতিনের মুখোশ চোখ টানছে। আর এসব মুখোশ বিক্রি করেই দোল-হোলিতে প্রায় ২০ লাখের ব্যবসা করেছেন শিল্পীরা। এমনটাই বলছে মুখোশ শিল্পীদের সংগঠন। তবে অতীতেও রঙের উৎসবের সময় আরও বেশি ব্যবসা হয়। এখনও পর্যন্ত ২০২৩ সালে দোল-হোলির সময় সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করেছিল চড়িদা। পুরুলিয়া ছৌ মুখোশ শিল্পী উন্নয়ন সমিতি, চড়িদার সহ-সভাপতি ফাল্গুনী সূত্রধর বলছেন, ‘‘দোল-হোলির সময় চড়িদা গ্রামের প্রত্যেকটি মুখোশের দোকানে এই দু’দিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিক্রিবাটা হয়েছে। মোট ১২০টি দোকান রয়েছে চড়িদা গ্রামে। ফলে সব মিলিয়ে এই দু’দিন প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ব‌্যবসা হয়েছে। তবে গত বছর আরও বেশি বিক্রি হয়েছিল। ২০২৩ সালে দোল-হোলির সময় সর্বকালের রেকর্ড ছিল। তবে এবার ছৌ নাচের মুখোশ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যেক মুখোশ শিল্পী ব্যাপক বরাত পেয়েছেন।’’

    মনোরঞ্জন মুখোশ হাউসের শিল্পী বিজয় সূত্রধরের কথায়, ‘‘প্রত্যেক ছৌ দলের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার বরাত মিলেছে এবার। এক একটা দোকান এখনই ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার বরাত পেয়ে গিয়েছে। ফলে বরাতের পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।’’ আর এই বিপুল বরাতের জেরে রাত দশটার পরেও ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে না মুখোশ গ্রাম চড়িদার। কাজ চলছেই। চড়িদা ছৌ মুখোশ শিল্পী সংঘের সভাপতি রমা সূত্রধর বলেন, ‘‘ফি বছরই চৈত্র-বৈশাখ মাসে ছৌ নাচের মরশুমে ভালো বরাত আসছে। কিন্তু এবার যেন অন্য বছরগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে সব।’’

    পুরুলিয়ার লোকশিল্প ও হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করা উৎপল দাস বলছেন, ‘‘এক একটি ছৌ নাচের মুখোশ ১০-১২টা অনুষ্ঠান পর্যন্ত টেকসই থাকে। যেহেতু এই সময় পুরুলিয়ার ছৌয়ের দলগুলি বিভিন্ন গ্রামে, গ্রামে পালা করে বেড়ায়। তাই মুখোশের ব্যাপক হারে বরাত মেলে। এছাড়া ঝাড়খণ্ডে যে সকল দল মানভূমের বা পুরুলিয়ার বীর রসের ঘরানার ছৌ নৃত্য করেন, তাঁরাও ছৌ নাচের মুখোশ কেনাকাটায় এই চড়িদা গ্রামেই ভিড় জমান। সবে মিলিয়ে মুখোশ শিল্পে পৌষমাস।’’ এই চড়িদায় গত বছর থেকেই শ্রীকৃষ্ণের মুখোশ আলাদাভাবে নজর কাড়ছে। আর এবার নয়া ট্রেন্ড বনদুর্গা। এছাড়া ছৌ পালার চরিত্র কিরাত- কিরাতিনকে অন্য লুকে নিয়ে এসে পলাশের মরশুমে একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সব শিল্পীরা।
  • Link to this news (প্রতিদিন)