• রাত তিনটেয় রায় ঘোষণা! ঠিক যেন জলি এলএলবি ২
    এই সময় | ১৯ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, বারাসত: অক্ষয় কুমারের জলি এলএলবি ২ সিনেমার সেই দৃশ্যের কথা মনে আছে? যেখানে ফেক এনকাউন্টারে পুলিশের গুলিতে নিহত এক সাজানো সন্ত্রাসবাসীর নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার করতে মধ্য রাত অব্দি আদালতে শুনানি চলেছিল। হুবহু একই ঘটনার সাক্ষী থাকল বারাসত আদালত।

    গভীর রাত। সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। চারিদিক শুনশান। কোথাও কোনও সা়ডাশব্দ নেই। তখন বারাসত আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে রুদ্ধশ্বাস শুনানি চলছে। সওয়াল জবাব শেষে রাত তিনটে নাগাদ রায় ঘোষণা করলেন বিচারক। সোমবার এ ভাবেই রাত জেগে মামলার শুনানি শেষ করে ইতিহাসে নাম তুললেন বারাসত আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

    আইন অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে কোর্টে হাজির করাতে হয় পুলিশকে। যদিও এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের পাঁচ দিন পর বারাসত আদালতে হাজির করায় মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। তার জেরেই সোমবার রাত তিনটে পর্যন্ত চলে শুনানি।

    আদালত সূত্রে জানা গেছে, একটি চেক বাউন্স হওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ মার্চ জ্যোতিপ্রকাশ দাস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। নিয়ম অনুযায়ী, পরের দিনই তাকে আদালতে পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে ১৭ মার্চ জ্যোতিপ্রকাশকে বারাসত আদালতে তোলা হয়। কারণ হিসেবে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ কোর্টকে জানায়, অভিযুক্ত অসুস্থ হওয়ায় প্রথমে তাকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে। যদিও অভিযুক্তের অসুস্থতা এবং সে যে হাসপাতালে ভর্তি ছিল তার সপক্ষে পুলিশ কোনও তথ্য প্রমাণ জমা দিতে পারেনি বলে আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ।

    সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জ্যোতিপ্রকাশকে প্রথমে একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়।পরবর্তীতে সেখান থেকে এই মামলাটি বারাসত আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে সরানো হয়। সোমবার রাত পৌনে ন’টার সময়ে এই মামলার শুনানি শুরু হয় এসিজেএম কোর্টে। মামলার শুনানি থাকায় সেখানে বিচারক ছাড়াও দুই পক্ষের আইনজীবী এবং আদালতের আধিকারিকরা হাজির ছিলেন। নজিরবিহীন ভাবে এই মামলার শুনানি চলে রাত তিনটে পর্যন্ত। শেষে অভিযুক্ত জ্যোতিপ্রকাশ দাসকে ১ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেন অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

    অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সুশোভন মিত্র বলেন, ‘আমি আমার পেশাগত জীবনে এত রাতে কোনও মামলার রায় হয়েছে বলে কখনও শুনিনি। পুলিশের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতেই রাত জেগে শুনানি করতে হল বিচারককে। তার কারণ, একজন অভিযুক্তকে বিনা বিচারে এতদিন আটকে রাখা যায় না।’

    বারাসত আদালতের আইনজীবী গৌরীশঙ্কর বল বলেন, ‘এটা একটা বিরল অভিজ্ঞতা। ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করতেই রাত তিনটে পর্যন্ত আদালত চালু রাখতে হলো। এটা সত্যিই একটা নজিরবিহীন ঘটনা।’

  • Link to this news (এই সময়)