সুজয় মুখোপাধ্যায় ও দেবদীপ চক্রবর্তী
যেন একটা শাটল ককের পালকবিহীন রবার খণ্ডটি আকাশ থেকে তীর বেগে ছুটে আসছে। গতি কমানোর জন্য সেটির উপরের অংশ থেকে ঝুপ করে খুলে গেল প্যারাশ্যুট। প্রথমে দু’টি, কিছুটা উচ্চতা কমতে আরও দু'টি প্যারাশ্যুট খুল গেল। হাওয়ার সঙ্গে দোল খেতে খেতে নেমে আসছে সেটি। গোটা বিশ্ব বিনিদ্র চোখ টানটান করে দেখছে সেই দৃশ্য। দেখছিলেন নাসার সিনিয়র সায়েন্টিস্ট বঙ্গসন্তান গৌতম চট্টোপাধ্যায়ও।
কয়েকঘণ্টা পরেই ড্রাগন ক্যাপসুলের দরজা খুলে যখন বেরিয়ে এলেন সুনীতারা, আপামোর বিশ্ববাসীর মতো শিশুসুলভ আনন্দে ফেটে পড়েন তিনিও। মনে মনে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা পেরেছি।’
২৮৬ দিন পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোচর সুনীতা উইলিয়ামস এবং আমেরিকার নভোচর বুচ উইলমোরকে পৃথিবীতে ফেরানোর সংগ্রাম সফল। অনুভূতিটা ঠিক কেমন? সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সেই আবেগ ‘এই সময় অনলাইন’-এর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
উচ্ছ্বাসমাখা গলায় বললেন, ‘আমরা খুবই খুশি। আমরা জানতাম ওঁরা সুস্থভাবেই ফিরে আসবেন। তবে মহাকাশ অভিযানে সব সময়ই ঝুঁকি তো থাকেই। কখন কী ঘটবে, সেটা আগে থেকে বলা যায় না। তবে শেষে ওঁরা ঠিকমতো পৃথিবীতে এসে পৌঁছেছেন, এটা বড় আনন্দের খবর।’
দিনটাকে বহুদিন মনে রাখবে এই গ্রহের মানুষ। মনে রাখবে, সেই গ্রহের অন্যতম ভূখণ্ড ভারতবর্ষও। তবে এর সাফল্য ঠিক কতদূর বিস্তৃত? গৌতম বলেন, ‘আসলে এই অভিযান প্রমাণ করল, মহাকাশ অভিযান বা সর্বোপরি বিজ্ঞান শুধু আমেরিকাবাসী বা ভারতবাসী নয়, সারা বিশ্বের লোক উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। অর্থাৎ মানব সভ্যতাকে এক সূত্রে বাঁধার বড় উপায় হলো বিজ্ঞান। সেটা ভেবে আমি খুব আনন্দিত।’
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আট দিন পর ফেরানো যায়নি সুনীতাদের। তার পরেও বার কয়েক চেষ্টা হয়, কিন্তু ফেরত আনার অভিযান আটকে যায়। অবশেষে স্বস্তির সাফল্য। উৎকণ্ঠা তো ছিলই? গৌতম বলেন, ‘আমাদের উৎকণ্ঠা ছিল। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আসলে নভোচররা যখন মহাকাশে যান, এক সপ্তাহের জন্যে গেলেও সেই নির্ধারিত সময় বেড়ে যেতে পারে, সেই রকম মানসিক প্রস্তুতি তাঁদের থাকে।’
মানব সভ্যতা এগিয়ে চলুক। সমান তালে এগিয়ে চলুক বিজ্ঞানও। এই সাফল্যই তৈরি করবে আরও সুনীতা, বুচ উইলমারকে। তৈরি করবে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিজ্ঞানীদেরও। উল্লেখ্য, গৌতম চট্টোপাধ্যায় নাসায় বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজের পাশাপাশি একাধিক বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানে ‘সাবমিলিমিটার ওয়েভ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি’ (সোয়াট) নিয়ে গবেষণার কাজেও অংশ নিয়েছেন তিনি।