জামিন হল না যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত সৌপ্তিকের! পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত
আনন্দবাজার | ১৯ মার্চ ২০২৫
যাদবপুরকাণ্ডে মঙ্গলবার রাতে সৌপ্তিক চন্দ্র নামে আরও এক পড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। সেখানেই ধৃত ছাত্রের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, ওই পড়ুয়া পড়াশোনায় ভাল। বৃহস্পতিবার তাঁর পরীক্ষা রয়েছে। তাই যে কোনও শর্তে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেলের নাম এফআইআরে নেই। বরং এই ঘটনায় যে ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁদের ডাকা হোক। অভিযুক্তদের নাগাল না পেয়ে পুলিশ ভাল ভাল ছাত্রদের ডেকে পাঠাচ্ছে। পুলিশের দাবি, সৌপ্তিক প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। অথচ সে রকম কিছুই তিনি করেননি বলে দাবি আইনজীবীর। ধৃত পড়ুয়ার আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, ওই পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকেন। ফলে পালানোর কোনও জায়গা নেই তাঁর। তা ছাড়া, অতীতেও কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই সৌপ্তিকের। এর পরেই মক্কেলের নিঃশর্ত জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী।
যদিও পড়ুয়ার জামিনের বিরোধিতা করেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। তাঁর পাল্টা দাবি, এই ঘটনায় আগে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, জেরায় তাঁদের বয়ান থেকেই সৌপ্তিকের নাম উঠে এসেছে। অভিযোগকারীর আইনজীবীর কথায়, ‘‘সিসিটিভিতেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সে সময় উনি কী করছিলেন।’’ প্রমাণ হিসাবে কিছু নথি এবং ছবিও বিচারককে দেখান তিনি। এর পরেই সৌপ্তিকের আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার একই মামলায় জামিন হয়েছে যাদবপুরের আর এক ছাত্র উজানের। সেই রায়ের পর্যবেক্ষণ ফের খতিয়ে দেখার আবেদনও জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।
গত ১ মার্চ রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার বিকেলে যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল সৌপ্তিককে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সৌপ্তিক-সহ যাদবপুরের বেশ কয়েক জন পড়ুয়াকে মঙ্গলবার থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেই তলবে সাড়া দিয়ে পড়ুয়ারা মিছিল করে থানায় যান। তার পর একে একে ওই পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই তালিকায় ছিলেন সৌপ্তিকও। সন্ধ্যার পর হঠাৎ পুলিশের তরফে জানানো হয়, সৌপ্তিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর জানাজানি হতেই থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা থানায় যা অভিযোগ জানিয়েছেন, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে না। উল্টে মিথ্যা মামলায় পড়ুয়াদের হয়রানি করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, যাদবপুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১ মার্চ রাতেই সাহিল আলি নামে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক প্রাক্তন পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও পরে আদালতে জামিন পান তিনি। ওই একই মামলায় গত ১২ মার্চ সৌম্যদীপ ওরফে উজান নামে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি হেফাজত শেষে মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। কিন্তু তার পরই তাঁকে আবার গ্রেফতার করতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ‘আজ়াদ কাশ্মীর’ পোস্টার লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া মামলায় আবার সৌম্যদীপকে গ্রেফতার করতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ।