জোটের কথা না ভেবে সংগঠন জোরদার করতে বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বকে নির্দেশ রাহুলের
আনন্দবাজার | ১৯ মার্চ ২০২৫
জোটের কথা না ভেবে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের সংগঠন জোরদার করুন। এমনই নির্দেশ দিয়ে বাংলায় আসবেন বলে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের আশ্বাস দিলেন রাহুল গান্ধী। বুধবার দিল্লিতে এআইসিসির সদর দফতরে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন এআইসিসি নেতৃত্ব। অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মালদহের সাংসদ ঈশা খান চৌধুরী, অভিজিত মুখোপাধ্যায়, সন্তোষ পাঠক, অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য রাহুল ছাড়াও বাংলার কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল। এআইসিসি সূত্রে খবর, বৈঠকের আগেই বাংলার কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভাবে কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের সংগঠনের পর্যবেক্ষক গোলাম আহমেদ মির। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের বুঝিয়ে দেন, এই বৈঠকের আয়োজন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জোটের বিষয়টি নির্ধারণ করার জন্য করা হয়নি। তাই শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে হবে সাংগঠনিক বিষয়ে।
শীর্ষ নেতাদের কাছে পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাংগঠনিক সমস্যা তথা বর্তমান পরিস্থিতির কথা তাদের সামনে তুলে ধরেছেন বঙ্গের কংগ্রেস নেতারা। এআইসিসি সূত্রে খবর, আরজি কর হাসপাতালের যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর রাজ্যের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন রাহুল। সঙ্গে বাংলার কংগ্রেস নেতারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি বিভাজনের কৌশল নিয়ে কট্টর হিন্দুত্বের লাইন নিয়েছে, তাও রাহুলের সামনে তুলে ধরেন। পাশাপাশি বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির মোকাবিলা করতে শাসকদল তৃণমূল কী পন্থা অবলম্বন করেছে, তাও উল্লেখ করেছেন নেতারা। সংসদের কক্ষ সমন্বয়ে প্রায়শই তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা যায় রাহুল-সহ কংগ্রেস সাংসদদের। এই বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের শঙ্কা দূর করতে রাহুল জানিয়েছেন, সংসদে কক্ষ সমন্বয় এবং কোনও রাজ্যে জোট করে চলা এক বিষয় নয়। অনেক ক্ষেত্রেই বিজেপি ছাড়াও বহু আঞ্চলিক দল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কংগ্রেস। সেই সব বিষয়গুলিও মাথায় রয়েছে এআইসিসির। তাই জোটের বিষয়ে অহেতুক চিন্তা না করে সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধিতে মন দিন বাংলার নেতৃত্ব। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, "রাহুলজি যে ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয়ের বিষয়টি আমাদের বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস আর তৃণমূলের হাত ধরবে না। তাতে আমরা একটু হলেও স্বস্তি বোধ করছি। কারণ ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে ভাবে কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৃণমূল বড় করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই ক্ষতি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আমাদের করেনি। তাই এই বিষয়টি যে রাহুলজির মনেও দাগ কেটেছে তা আমাদের খুব ভাল লেগেছে।"
কোনও নেতা যাতে জোট নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বকে অহেতুক বিড়ম্বনায় না ফেলেন, সেই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বিষয়টি নিয়ে বাংলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর এআইসিসি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় যান। এআইসিসি সূত্রে খবর, কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে বাংলার কংগ্রেস নেতাদের আশ্বাস দিয়েছেন, রাহুল প্রিয়াঙ্কা এবং তিনি অবশ্যই বাংলায় যাবেন। তারা যেখানে চাইবেন সেখানেই হাজির হবেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে ভেঙে পড়া সংগঠন গড়ে মঞ্চ তৈরি করতে হবে বাংলার নেতাদেরই। সেই কাজে যে যে সহায়তা পশ্চিমবঙ্গের সংগঠনের প্রয়োজন হবে তা এআইসিসি করতে প্রস্তুত। খড়্গে আরও জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে সমমনভাবাপন্ন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করতে গেলে নিজেদের সংগঠনের জোর থাকা জরুরি। তাই আপাতত জোটের কথা না ভেবে নিজেদের পায়ের মাটি শক্ত করতে বলেছেন খড়্গে।
জোটের কথা বৈঠকে উল্লেখ করতে না বলা হলেও, বেশ কয়েকজন নেতা নেতাদের গত বছর হওয়া রাজ্যের বিভিন্ন উপনির্বাচনের ফলাফলের কথা বলেছেন। সেইসব নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করে কংগ্রেস যে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সেই বিষয়টিও এআইসিসি নেতৃত্বকে জানিয়েছেন তারা।
কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ৪৮ বছর ক্ষমতায় নেই। তা সত্ত্বেও যেভাবে বাংলায় কংগ্রেস কর্মীরা দল করছেন, তাতে খুশি এআইসিসি নেতৃত্ব। এই বার্তাটি কর্মী মহলে পৌঁছে দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এআইসিসির তরফে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর বলেন, "আমাদের নেতারা সার্বিকভাবে দলের সংগঠন মজবুত করতে বলেছেন। শুধু ভোটে জেতার জন্য নয়, সামাজিকভাবে মানুষের পাশে থাকা, এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা রয়েছে। তাই বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার দর্শনের বিরুদ্ধে কংগ্রেস যেভাবে পাল্টা দর্শন নিয়ে লড়াই করছে সেভাবেই পশ্চিমবঙ্গে লড়াই করে আমাদের সংগঠন জোরদার করতে হবে। আপাতত আমাদের এই বার্তায় দেওয়া হয়েছে। তাই সেই নির্দেশ নিয়েই আমরা পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনকে বাড়ানোর কাজ করব।"