• টাকা আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষককে আটকে রাখলেন অভিভাবকরা
    এই সময় | ২০ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়,আসানসোল: তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন অনুপস্থিত। পুলিশে অভিযোগ করার পরেও খুঁজে পাওয়া যায়নি মাসের পর মাস। নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া সেই প্রধান শিক্ষক আচমকাই হাজির স্কুলে। তাতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ক্ষিপ্ত অভিভাবকরা তাঁকে একটি ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে দেন। উত্তেজনা থামাতে স্কুলে আসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের আসানসোল শিক্ষাচক্রের পরিদর্শক। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের থেকে লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন।

    বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে আসানসোলের রেলপাড় এলাকার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বাবুয়াতলা কাজী নজরুল ইসলাম উর্দু ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আলম কাদরির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি স্কুলে উন্নয়ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সবমিলিয়ে প্রায় সাত লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন।

    এ দিন ক্ষিপ্ত অভিভাবকরা স্কুলের একটি ঘরে তাঁকে প্রায় চার ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখা হয়। তাঁদের দাবি, এমন দুর্নীতিপরায়ণ প্রধানশিক্ষককে কিছুতেই স্কুলে রাখা যাবে না।

    গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ওই অভিযুক্ত প্রধানশিক্ষক স্কুলেই আসেননি। মঙ্গলবার আচমকা তিনি স্কুলে হাজির হন এবং জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁর কাছে চিঠিও রয়েছে। এ দিন সকালে আবার তাঁকে দেখে ক্ষেপে ওঠেন অভিভাবকরা। তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রশ্ন তোলেন, প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তার নিষ্পত্তি না-হওয়ার আগে তিনি কী করে স্কুলে যোগ দিতে পারেন?

    বিক্ষোভের খবর পেয়ে চলে আসেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সিকে রেশমা, যিনি এই স্কুলের পরিচালন সমিতিরও সম্পাদক। যোগাযোগ করেন আসানসোল উত্তর থানার পুলিশের সঙ্গে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ বিষয়ে কথা বলা উচিত জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে। আসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের আসানসোল শিক্ষাচক্রের পরিদর্শক অরিজিৎ মণ্ডল। তিনি বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখেন।

    রেশমার অভিযোগ, ‘২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আমি ওঁর বিরুদ্ধে উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। উনি সরকারি চেকে আমার সই জাল করে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

    ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৭১ এবং ৪৬৮ ধারায় মামলা করা হয়। ভেবে অবাক লাগছে, এমন একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশ গত দেড় বছরেও কোনও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারল না! এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয় নয়, রাজ্য সরকারের পাঠানো টাকা কেউ আমার সই জাল করে তুলে নিচ্ছে, তা মানতে পারব না।’পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন সই ভুয়ো কি না, তা জানতে চেকগুলি পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক বিভাগে।

    প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ‘এই সময়’-কে কলকাতা থেকে বলেন, ‘যে হেতু ওই শিক্ষকের জেল হয়নি, তাই আইন অনুযায়ী তাঁকে স্কুলে যোগ দিতে বলেছি।

    তবে ওঁর আর ছুটি পাওনা নেই বলে গত কয়েক মাস বেতন বন্ধ আছে। ওখানকার বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে এ দিনের ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছি। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে এই স্কুলে রাখা সম্ভব নয়। অন্য কোনও স্কুলে পাঠানো হবে।’

    প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ওঁকে তিনবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে। তিনি স্বীকার করেছেন, স্কুলের বেশ কিছু টাকা ওঁর কাছে রয়েছে, তা ফেরত দিতে চান। চেকে সই জাল করা হয়েছে কি না, তা পুলিশ দেখবে। স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এখন ফ্রিজ় করা হয়েছে। কী ভাবে টাকা নেওয়া হবে, তা নিয়ে পর্ষদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)